পদার্থবিজ্ঞান (চতুর্থ
অধ্যায়)
কাজ, ক্ষমতা ও শক্তি
LECTURE SHEET
কাজ (Work) : কোনো বস্তুর ওপর প্রযুক্ত বল এবং বলের দিকে বস্তূর অতিক্রান্ত দূরত্বের গুণফল দ্ববারা কাজ পরিমাপ করা হয়। একে W দ্বারা প্রকাশ করা হয়। কাজ একটি স্কেলার বা অদিক রাশি। কাজের একক হলো জুল (J) এবং এর মাত্রা [ML²T⁻²]
জুল (Jule) : কোনো বস্তুর ওপর এক নিউটন বল প্রয়োগের ফলে যদি বলের দিকে বলের প্রয়োগবিন্দু থেকে বস্তূর এক মিটার (m) সরণ হয় তবে সম্পন্ন কাজের পরিমাণকে এক জুল(1j ) বলে। 1j= 1N×1m = 1Nm
বলের দ্বারা কাজ বা ধনাত্মক কাজ (Positive Work) : যদি বল প্রয়োগের ফলে বস্তূর বলের দিকে সরে যায় তাহলে সেই কাজকে ধনাত্মক কাজ বা বলের দ্বারা কাজ বলে।
ব্যাখ্যা : একটি ডাস্টার টেবিলের ওপর থেকে মাটিতে ফেলে দিলে ডাস্টারটি অভিকর্ষ বলের প্রভাবে নিচের দিকে পড়বে। এক্ষেত্রে অভিকর্ষ বলের ধারা কাজ হয়েছে বোঝায়। ।
বলের বিরুদ্ধে কাজ বা ঋণাত্মক কাজ (Negative Work) : যদি বল প্রয়োগের ফলে বস্তূর বলের বিপরীত দিকে সরে যায় তাহলে সেই কাজকে ঋণাত্মক কাজ বা বলের বিরুদ্ধে কাজ বলে।
ব্যাখ্যা : একটি ডাস্টার যদি মেঝে থেকে টেবিলের ওপর ওঠানো হয়, তাহলে অভিকর্ষ বলের বিরদ্ধে কাজ হবে বা অভিকর্ষ বলের জন্য ঋণাত্মক কাজ হবে। কেননা এক্ষেত্রে অভিকর্ষ বল যে দিকে ক্রিয়া করে সরণ তার বিপরীত দিকে হয়।
শক্তি (Energy) : কোনো ব্যক্তি বা উৎসের কাজ করার সামর্থ্যকে শক্তি বলে। শক্তি হলো স্কেলার বা অদিক রাশি। শক্তির একক হলো জুল। একে E দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এর মাত্রা [E] = [ML²T²]। শক্তি ও কাজের একক ও মাত্রা অভিন্ন । অতএব, কৃতকাজ = ব্যয়িত শক্তি।
গতিশক্তি (Kinetic Energy) : কোনো গতিশীল বস্তূ তার গতির জন্য কাজ করার যে সামর্থ্য লাভ করে তাকে গতিশক্তি বলে।
উদাহরণ: চলন্ত পাখা চলন্ত গাড়ি
বিভব শক্তি (Potential Energy) : স্বাভাবিক অবস্থান বা অবস্থা থেকে পরিবর্তন করে কোনো বস্তুকে অন্য কোনো অবস্থান বা অবস্থায় আনলে বস্তূর কাজ করার যে সামর্থ্য অর্জন করে তাকে বিভব শক্তি বলে।
অভিকর্ষজ বিভব শক্তি (Gravitational Potential Energy) : অভিকর্ষ বলের বিরুন্ধে কাজ করে কোনো বস্তূর অবস্থানের পরিবর্তন করলে বস্তূ কাজ করার যে সামর্থ্য লাভ করে তাকে অভিকর্ষজ বিভব শক্তি বলে। বিভব শক্তিকে Eᴘ দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
গাণিতিকভাবে,Eᴘ =mgh
1 কিলোওয়াট-ঘণ্টা (KWh) : সাধারণত বিদ্যুৎ শক্তির হিসাবনিকাশের সময় কিলোওয়াট-ঘণ্টা (KWh) এককটি ব্যবহৃত হয়। এক কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কোনো যন্ত্র এক ঘণ্টা কাজ করতে যে শক্তি ব্যয় হয় তাকে এক কিলোওয়াট ঘণ্টা বা 1KWh বলে।
আমরা জানি, 1 KWh = 1000 Wh
= 1000 js⁻¹ x 3600 s
= 1000 Js⁻¹ x (60 × 60) s
=3.6 x 10 J ।
শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতি (Principle of Conservation of Energy) : শক্তির সৃষ্টি বা বিনাশ নেই, শক্তি কেবল একরূপ থেকে অপর এক বা একাধিক রুপে পরিবর্তিত হতে পারে। মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ নির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয়।
ক্ষমতা (Power) : কাজ সম্পাদনকারী কোনো ব্যক্তি বা উৎসের কাজ করার হারকে ক্ষমতা বলে। অর্থাৎ, একক সময়ে ব্যক্তি বা উৎস দ্বারা সম্পাদিত কাজের পরিমাণই হলো ক্ষমতা।
ব্যাখ্যা কোনো ব্যক্তি বা উৎস। সময়ে W পরিমাণ কাজ সম্পাদন করলে ক্ষমতা,P=W/t
P = ক্ষমতার দিক নেই, কাজেই ক্ষমতা একটি স্কেলার রাশি। এর একক ওয়াট (Watt) এবং মাত্রা [P] = [ML²T⁻³]
ওয়ার্ট (Watt) : এক সেকেন্ডে এক জুল কাজ করা বা শক্তি রূপান্তরের হারকে এক ওয়াট বলে। 1W =1j/1s =1 js⁻¹ = 1Nms⁻¹
কর্মদক্ষতা (Efficiency) : কোনো যন্ত্রে যতটুকু শক্তি পাওয়া যায় তাকে কার্যকর শক্তি বলে। আর যন্ত্রের কৰ্মক্ষমতা বলতে যন্ত্রের থেকে মোট যে কার্যকর শক্তি পাওয়া যায় এবং মোট যে শক্তি দেয়া হয়েছে তার অনুপাতকে বোঝায়। কৰ্মদক্ষতাকে সাধারণত গ্রিক শব্দ(η=ইটা)দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
ব্যাখ্যা : কোনো ইঞ্জিনকে চালানোর জন্য পেট্রোলের মোট রাসায়নিক শক্তি E₁, এবং ইঞ্জিন হতে প্রাপ্ত গতিশক্তি বা কার্যকর শক্তি E₀ হলে, কর্মক্ষমতা, η = E₀/E₁ কর্মদক্ষতার কোনো একক নেই। কর্মদক্ষতাকে শতকরায় প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
η = (E₀/E₁) × 100%
E x-100% কোনো যন্ত্রের কর্মদক্ষতা 90%-এর অর্থ : কোনো যন্ত্রের কর্মক্ষমতার 90% বলতে আমরা বুঝি, যদি এই যন্ত্রে 100 J শক্তি দেওয়া হয়, তাহলে সে যন্ত্র থেকে লভ্য কার্যকর শক্তি 90 J পাওয়া যাবে।
η অশ্বক্ষমতা (Horse Power ) : অনেক সময় ইঞ্জিনের ক্ষতাকে প্রকাশ করার জন্য অক্ষশ্বমতা (HP) নামের একটি একক ব্যবহার করা হয়। 1 H. P = 746W ।
বৈদ্যুতিক পাওয়ার স্টেশনের ক্ষমতা 200 মেগাওয়াট-এর অর্থ : কোনো বৈদ্যুতিক পাওয়ার স্টেশনের ক্ষমতা 200 মেগাওয়াট বলতে বোঝায় ঐ পাওয়ার স্টেশনটি প্রতি সেকেন্ডে 200,000,000 জুল তড়িৎ শক্তি সরবরাহ করছে।
এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সুএসমূহ হলো: