পদার্থবিজ্ঞান
গতি (Motion)
Lecture Sheet
স্থিতি (Rest):সময়ের পরিবর্তনের সাথে পরিপার্শ্বের সাপেক্ষে যখন কোনো বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন ঘটে না, তখনই ঐ বস্তুকে স্থিতিশীল বা স্থির বলে। আর এ অবস্থান অপরিবর্তিত থাকাকে বলে স্থিতি। যেমন : টেবিলের ওপর একটি বই, পৃথিবীর সাপেক্ষে ঘরবাড়ি, গাছপালা ইত্যাদি।
গতি (Motion) : সময়ের পরিবর্তনের সাথে পরিপার্শ্বের সাপেরে যখন কোনো বস্তূর অবস্থানের পরিবর্তন ঘটে, তখন তাকে গতিশীল বলা হয়। আর এ অবস্থানের পরিবর্তন ঘটানোকে গতি বলে। যেমন : নিক্ষিপ্ত তাঁর, চলন্ত সাইকেল ইত্যাদি।
বিভিন্ন প্রকার গতি (Types of motion )
রৈখিক গতি : কোনো বস্তু যদি একটি সরলরেখা বরাবর গতিশীল হয় অর্থাৎ কোনো বস্তুর গতি যদি একটি সরলরেখার ওপর সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে তার গতিকে রৈখিক গতি বলে। যেমন : একটি সোজা সড়কে কোনো গাড়ির গতি রৈখিক গতি।
ঘূর্ণন গতি: যখন কোনো বস্তু কোনো নির্দিষ্ট বিন্দু বা অবস্থান থেকে বস্তূ কণাগুলোর দূরত্ব অপরিবর্তিত রেখে ঐ বিন্দু বা অবস্থান কেন্দ্র করে ঘোরে তখন সে বস্তুর গতিকে ঘূর্ণন গতি বলে। যেমন: বৈদ্যুতিক পাখার গতি ঘড়ির কাঁটার গতি ইত্যাদি।
চলন গতি : কোনো বস্তু যদি এমনভাবে চলতে থাকে যাতে করে বস্তুর সকল কণা একই সময়ে একই দিকে সমান দূরত্ব অতিক্রম করে তাহলে ঐ গতিকে চলন গতি বলে। যেমন : একখানা বইকে ঘুরতে না দিয়ে ঠেলে টেবিলের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে নিয়ে গেলে এই গতি চলন গতি হবে।
পর্যাবৃত্ত গতি: কোনো গতিশীল বস্তূ কণার গতি যদি এমন হয় যে, এটি এর গতিপথে কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুকে নির্দিষ্ট সময় পর পর একই দিক থেকে অতিক্রম করে, তাহলে সেই গতিকে পর্যাবৃত্ত গতি বলে।
এই গতি বৃত্তাকার, উপবৃত্তাকার বা সরলরৈখিক হতে পারে। যেমন : ঘড়ির কাঁটার গতি, সূর্যের চারদিকে
পৃথিবীর গতি, বাষ্প বা পেট্রোল ইঞ্জিনের সিলিন্ডারের মধ্যে পিস্টনের গতি পর্যাবৃত্ত গতি।
পর্যায়কাল: পর্যাবৃত্ত গতিসম্পন্ন কোনো কণা যে নির্দিষ্ট সময় পর পর নির্দিষ্ট বিন্দুকে নির্দিষ্ট দিক দিয়ে অতিক্রম করে সেই সময়কে পর্যায়কাল বলে।
স্পন্দন গতি : পর্যাবৃত্ত গতিসম্পন্ন কোনো বস্তূ যদি পর্যায়কালের অর্ধেক সময় কোনো নির্দিষ্ট দিকে এবং বাকি অর্ধেক সময় একই পথে তার বিপরীত দিকে চলে, তবে এর গতিকে স্পন্দন গতি বলে। যেমন:সরল দোলকের গতি, কম্পনশীল সুরশলাকা ও গিটারের তারের গতি।
স্কেলার বা অদিক রাশি (Scalars) : যেসব ভৌত রাশিকে শুধু মান দ্বারা সম্পূর্ণ রুপে প্রকাশ করা যায়, দিক নির্দেশের প্রয়োজন হয় না তাদেরকে স্কেলার বা অদিক রাশি বলে। যেমন : দৈর্ঘ্য, ভর, দ্রুতি, কাজ, শক্তি, সময়, আয়তন, তাপমাত্রা ইত্যাদি।
ভেক্টর বা দিক রাশি (Vectors) : যেসব ভৌত রাশিকে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করার জন্য মান ও দিক উভয়ের প্রয়োজন হয় তাদেরকে ভেক্টর বা দিক রাশি বলে। যেমন: সরণ, ওজন, বেগ, ত্বরণ, বল, তড়িৎ তীব্রতা ও চৌম্বক তীব্রতা ইত্যাদি।
দূরত্ব (Distance): যেকোনো দিকে একটি বস্তূ যে পথ অতিক্রম করে তাকে বস্তুটির দূরত্ব বলে। দূরত্বের মান আছে কিন্তু দিক নেই। দূরত্বের একক মিটার (m) এবং মাত্রা [L]।
সরণ (Displacement) : একটি নির্দিষ্ট দিকে গতিশীল কোনো বস্তূ অবস্থানের পরিবর্তনকে ঐ বস্তুর সরণ বলে। সরণের মাত্রা হলো দৈর্ঘ্যের মাত্রা [L]। সরণের একক হলো দৈর্ঘ্যের একক অর্থাৎ মিটার (m)।
দ্রুতি/বেগ(Speed): কোনো একটি গতিশীল বস্তূ সরণ বা বক্রপথে স্থান পরিবর্তনের হারকে দ্রুতি/বেগ বলে। অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডের অতিক্রান্ত দূরত্বই দ্রুতি/বেগ।
দ্রুতি=দূরত্ব÷সময়
=d÷t [ এখানে, দূরত্ব = d, সময়=t]
দ্রুতি একটি স্কেলার বা অদিক রাশি। এসআই বা আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে একক মিটার/সেকেন্ড (ms⁻¹)। দ্রুতি মাত্রা সমীকরণ [v] = [LT⁻¹ ]।
গড় দ্রুতি/গড় বেগ(Mean Speed) : কোনো বস্তুর গতিকালে যদি কখনো দ্রুতির মানের কোনো পরিবর্তন না হয় অর্থাৎ বস্তুটি যদি সর্বদা সমান সময়ে সমান দূরত্ব অতিক্রম করে তাহলে ঐ বস্তুর দ্রুতিকে সুষম দ্রুতি/সুসম বেগ বলে। আবার, যদি বস্তুর গতি সমান সময়ে সমান দূরত্ব অতিক্রম না করে তাহলে সেই দ্রুতিকে অসম দ্রুতি/অসম বেগ বলে। বস্তূ যদি সুষম দ্রুতিতে না চলে তাহলে তার অতিক্রান্ত মোট দূরত্বকে সময় দিয়ে ভাগ করলে গড়ে প্রতি একক সময়ে অতিক্রান্ত দূরত্ব পাওয়া যায়, একে গড় দ্রুতি/গড় বেগ বলে।
অর্থাৎ, গড় দ্রুতি=মোট দূরত্ব÷সময়
বেগ (Velocity) : সময়ের সাথে কোনো বস্তুর সরণের হারকে বেগ বলে। অর্থাৎ বস্তু নির্দিষ্ট দিকে একক সময়ে যে পথ অতিক্রম করে তাই বেগ। এটি একটি ভেক্টর রাশি। বেগের মাত্রা [LT-1]। বেগের একক ও দ্রুতির একক একই অর্থাৎ [ms⁻¹]।
সুষম বেগ : যদি গতিশীল কোনো বস্তুর বেগের মান ও দিক অপরিবর্তিত থাকে তাহলে সেই বস্তূর বেগকে সুষম বেগ বা সমবেগ বলে।
যেমন : বাতাসের বেগ 332 ms⁻¹ ।
ত্বরণ (Acceleration) : সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো একটি বস্তুর বেগ বৃদ্ধির হারকে ত্বরণ বলে। একে 'a' দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
কোনো বস্তুর বেগ যদি নির্দিষ্ট দিকে সবসময়ই একই হারে বাড়তে থাকে তাহলে সে ত্বরণকে সুষম ত্বরণ বা সমত্বরন বলে।
যেমন : অভিকর্ষের প্রভাবে মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তুর ত্বরণ।
আবার কোনো বস্তুর বেগ বৃদ্ধির হার যদি সমান না থাকে তাহলে সে ত্বরণকে অসম ত্বরণ বলে। যেমন : গাড়ি.সাইকেল, রিকশা ইত্যাদির গতি।
মন্দন (Deceleration) : সরল পথে চলমান বস্তুর সময়ের সাথে বেগ হ্রাসের হারকে ঋণাত্মক ত্বরণ বা মন্দন বলে।
যেমন: ব্রেক কষার পর যেকোনো যানবাহনের গতি।
দ্রুতি ও বেগের মধ্যে পার্থক্য:
অভিকর্ষ (Gravity) : এ মহাবিশ্বে পৃথিবীর সাথে অন্য যেকোনো বস্তুর আকর্ষণই হলো অভিকর্ষ বা মাধ্যাকর্ষণ। অর্থাৎ কোনো বস্তুর ওপর পৃথিবীর আকর্ষণকে অভিকর্ষ বলে।
মহাকর্ষীয় ধ্রুবক (Gravitational constant) : প্রত্যেকটি একক (1kg) ভরের দুটি বস্তূকণাকে একক (1m) দূরত্বে স্থাপন করলে এরা পরস্পরকে যে বল দ্বারা আকর্ষণ করে তার সংখ্যামানকে মহাকর্ষীয় ধ্রুবক বলা হয়। মহাকর্ষীয় ধ্রুবককে G দ্বারা প্রকাশ করা হয়। ¶এর একক Nm²kg⁻² এবং মাত্রা [L³M⁻¹T⁻²]।
অভিকর্ষজ ত্বরণ (Acceleration Due to Gravity): অভিকর্ষ বলের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠে মুক্তভাবে পড়ন্ত কোনো বস্তুর বেগ বৃদ্ধির হারকে অভিকর্ষজ ত্বরণ বলে। একে 'g' দ্বারা প্রকাশ করা হয়। অভিকর্ষজ ত্বরণের মাত্রা [LT⁻²]। এসআই বা আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে অভিকর্ষজ ত্বরণের একক ms⁻²। হিসাবের সুবিধার জন্য অভিকর্ষজ ত্বরণের আদর্শ মান ধরা হয় 9.81 ms⁻² ।
পড়ন্ত বস্তুর সূত্র (Laws of Falling bodies) : স্থির অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তুর যেতে গ্যালিলিও তিনটি সূত্র বের করেন। সূত্রগুলো হলো:
প্রথম সূত্র : স্থির অবস্থান এবং একই উচ্চতা থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত সকল বস্তু, সমান সময়ে সমান পথ অতিক্রম করে।
দ্বিতীয় সূত্র : স্থির অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তুর নির্দিষ্ট সময়ে (t) প্রাপ্ত বেগ (v) ঐ সময়ের সমানুপাতিক।অর্থ্যাৎ v ∝ t
তৃতীয় সূত্র : স্থির অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তু নির্দিষ্ট সময়ে যে দূরত্ব (h) অতিক্রম করে তা ঐ সময়ের (t) বর্গের সমানুপাতিক। অর্থ্যাৎ h ∝ t²
বেগ-সময় লেখ :
অসম বেগে চলমান বস্তুর বেগ সময়ের ওপর নির্ভর করে। এই সম্পর্ক একটি লেখের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়। এক্ষেত্রে ছক কাগজে X-অক্ষ বরাবর সময় (t) এবং Y অক্ষ বরাবর বেগ (v) স্থাপন করে বেগ সময় লেখ পাওয়া যায়। পড়ন্ত বস্তুর গতির সমীকরণ (Equation of Motion of Falling bodies) :
কোনো পড়ন্ত বস্তুর আদিবেগ যদি u হয় । তবে t সেকেন্ড পরে বেগ v হয় এবং সেই সময়ে বস্তুটি যদি h দূরত্বে নেমে আসে তবে গতির সমীকরণগুলো হবে,
1.v=u+gt
2.h = ut+½gt²
3.v²= u² + 2gh.
এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সুএসমূহ হলো:
এখানে, a=ত্বরন, u=আদিবেগ, v=শেষবেগ, t=সময়, s=অতিক্রান্ত দূরত্ব, g=অভিকর্ষজ ত্বরণ, h=উচ্চতা
1.a=(v-u)/t
2.v=u+at
3.s=ut+½at²
4.v²=u²+2as
5.v=s/t
6.s={(u+v)/2}×t
7.v=u+gt
8.h={(u+v)/2}×t
9.h=ut+½gt²
10.v²=u²+2gh
এই অধ্যায়ের সকল নোট এর পিডিএফ পেতে এখানে ক্লিক করুণ ---
thanks a lot
ReplyDelete