সপ্তম অধ্যায়
তরঙ্গ ও শব্দ
LECTURE SHEET
উদাহরণ : পানির ঢেউ, বাতাসে ধানের ক্ষেতে ঢেউ, শব্দ তরঙ্গ, আলোক তরঙ্গ, ভূতরক্ষা (Earth Wave), তড়িৎ চুম্বক তরঙ্গ ইত্যাদি।
তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য (Wave's Characteristics) :
১. মাধ্যমের কণার স্পন্দন গতির ফলে তরঙ্গ সৃষ্টি হয় কিন্তু মাধ্যমের কণা স্থানান্তরিত হয় না।
২. যান্ত্রিক তরঙ্গ সঞ্চালনের জন্য মাধ্যম প্রয়োজন
৩. তরঙ্গ একস্থান থেকে অন্যস্থানে শক্তি সঞ্চালন করে।
৪. তরঙ্গের বেগ মাধ্যমের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে।
৫. তরঙ্গের প্রতিফলন ও প্রতিসরণ ও উপরিপাতন ঘটে।
পর্যায়কাল বা দোলনকাল (Time Period) : তরঙ্গ সঞ্চালনকারী কোনো কণার একটি পূর্ণ স্পন্দন সম্পন্ন করতে যে সময় লাগে তাকে ঐ তরঙ্গের পর্যায়কাল বলে। পর্যায়কালকে T দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এর একক সেকেন্ড (s)।
পর্যায়কাল, T = 1 / f
কম্পাঙ্ক (Frequency) : তরঙ্গ সঞ্চালনকারী কোনো কণা এক সেকেন্ডে যতগুলো স্পন্দন সম্পন্ন করে
তাকে কম্পাঙ্ক বলে। একে f দ্বারা প্রকাশ করা হয়। কম্পাঙ্কের এসআই একক হার্জ (Hertz বা Hz)
1Hz = 1 vib/cycle =1 (স্পন্দন / সেকেন্ড)
= 1s⁻¹
কম্পাঙ্ক, f=১/পর্যায়কাল
= 1 / T
আবার, f = v / λ
* t সেকেন্ডে N টি কম্পন সম্পন্ন হলে,
কম্পাঙ্ক , f = N / t
বিস্তার (Amplitude) : তরঙ্গ সঞ্চালনকারী কোনো কণা সাম্যাবস্থান থেকে যেকোনো একদিকে সর্বাধিক যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে তরঙ্গের বিস্তার বলে। বিস্তারকে a দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এসআই বা আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে বিস্তারের একক মিটার (m)।
চিএ: বিস্তার (a) |
দশা (Phase): গতির সম্যক অবস্থাকে তার দশা বলে। কোনো একটি মুহূর্তে গতির সম্যক অবস্থা বলতে ঐ বিশেষ মুহূর্তে কণাটির সরণ, বেগ, ত্বরণ ইত্যাদি বোঝায়।
তরঙ্গদৈর্ঘ্য (Wave Length) : তরঙ্গ সঞ্চালনকারী কোনো কণার একটি পূর্ণ স্পন্দন সম্পন্ন করতে যে সময় লাগে, সেই সময়ে তরঙ্গ যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে তরঙ্গদৈর্ঘ্য বলে। অর্থাৎ পরপর দুটি তরঙ্গশীর্ষ বা তরঙ্গপাদের মধ্যবর্তী দূরত্ব হচ্ছে তরঙ্গদৈর্ঘ্য। তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে (λ) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। একক (m)
চিএ: তরঙ্গদৈর্ঘ্য (λ) |
তরঙ্গবেগ (Wave Velocity) : তরঙ্গ নির্দিষ্ট দিকে একক সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে তরঙ্গবেগ বলে।একে (v) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। একক (ms⁻¹)
তরঙ্গবেগ, v = f . λ
অনুপ্রস্থ তরঙ্গ (Transverse Wave ) : যে তরঙ্গ মাধ্যমের কণাগুলো স্পন্দনের দিকের সাথে সমকোণে অগ্রসর হয়, তাকে অনুপ্রস্থ তরঙ্গ বলে।
উদাহরণ:পানির তরঙ্গ, বেতার তরঙ্গ ইত্যাদি অনুপ্রস্থ বা আড় তরঙ্গ
অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ (Longitudinal Wave ) : যে তরঙ্গ মাধ্যমের কণাগুলোর স্পন্দনের দিকের সাথে সমান্তরালে অগ্রসর হয়, সেই তরঙ্গকে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ বলে। যেমন : শব্দ তরঙ্গ।
অগ্রগামী তরঙ্গ: যখন কোনো মাধ্যমের ভেতর আন্দোলন এক স্তর থেকে অন্য স্তরে তরঙ্গ আকারে সঞ্চালিত হতে হতে সামনের দিকে একটি নির্দিষ্ট বেগে অগ্রসর হয়, তখন তাকে অগ্রগামী তরঙ্গ বলে।
শব্দ (Sound): শব্দ এক প্রকার শক্তি, যা একটি কম্পনশীল বস্তু হতে উৎপন্ন হয়ে ঐ বস্তূসংলগ্ন জড় মাধ্যমের সাহায্যে আমাদের কানে পৌঁছে প্রকৃতির অনুভূতি জন্মায় বা জন্মাতে চেষ্টা করে।
*শব্দ স্থিতিস্থাপক জড় মাধ্যম অবলম্বন করে তরঙ্গ আকারে চলে।
শব্দের উৎপত্তি (Production of Sound) : শব্দ উৎপত্তির মূল উৎসই বস্তূর কম্পন। বস্তূর কম্পন
যতক্ষণ থাকে ততক্ষণই তার শব্দ নিঃসরণ হয়। এ শব্দ নিরবচ্ছিন্ন স্থিতিস্থাপক মাধ্যমের মধ্য দিয়ে সঞ্চালিত হয় এবং কানে পৌঁছে শ্রবনের অনুভূতি জন্মায়।
*বস্তুর কম্পন থেকেই শব্দের উদ্ভব হয়।
*শব্দের প্রতিফলন (Reflection of Sound) : কোনো শব্দ তরঙ্গ একটি সুষম মাধ্যমের মধ্য দিয়ে চলার সময় যদি ভিন্ন ধরনের একটি মাধ্যমে বাধা পেয়ে পূর্বের মাধ্যমে ফিরে আসে তাহলে এই ঘটনাকে শব্দের প্রতিফলন বলে।
*শব্দের প্রতিধ্বনি (Echo) : কোনো উৎস থেকে সৃষ্ট শব্দ যদি দূরবর্তী কোনো মাধ্যমে বাধা পেয়ে উৎসের কাছে ফিরে আসে তখন মূল ধ্বনির যে পুনরাবৃত্তি হয় তাকে শব্দের প্রতিধ্বনি বলে।
শ্রাব্যতার পাল্লা (Audibility Range) : শব্দের উৎপত্তির জন্য মাধ্যমে কম্পন সৃষ্টি করতে হয়। উৎসের কম্পাঙ্ক 20Hz থেকে 20000Hz এর মধ্যে সীমিত থাকলেই আমরা শব্দ শুনতে পাই। একে শ্রাব্যতার পাল্লা বলে।
শব্দোত্তর তরঙ্গ (Ultrasonic Waves) : যে শব্দ তরঙ্গের কম্পাঙ্ক 20,000 Hz-এর চেয়ে বেশি তাকে
শব্দোত্তর তরঙ্গ বলে। শব্দ উৎসের কম্পন সংখ্যা প্রতি সেকেন্ডে 20,000 বার অর্থাৎ কম্পাঙ্কে 20,000 Hz এর বেশি হলে উৎপন্ন শব্দ আমরা শুনতে পাই না।
শব্দেতর তরঙ্গ (Infrasonic Waves) : যে শব্দ তরঙ্গের কম্পাঙ্ক 20 Hz এর চেয়ে কম তাকে শব্দেতর তরঙ্গ বলে। শব্দ উৎসের কম্পন সংখ্যা প্রতি সেকেন্ডে 20 বার অর্থাৎ কম্পাঙ্ক 20 Hz এর কম হলে উৎপন্ন শব্দ আমরা শুনতে পাই না।
শব্দোত্তর তরঙ্গের ব্যবহার (Use of Ultrasonic Waves) :
১.সমুদ্রের গভীরতা নির্ণয়, হিমশৈল, ডুবোজাহাজ ইত্যাদির অবস্থান নির্ণয়,শ্রোতাশ্রয়ের মুখ থেকে জাহাজকে পথ প্রদর্শন
২.রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা,
৩.ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করা,
ধাতবপিণ্ড বা পাতে সূক্ষ্মতম ফাটল অনুসন্ধান;
৪.সূক্ষ্ম ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি পরিষ্কার করা;
বাদুড়ের পথ চলা : বাদুড় চলার সময় ক্রমাগত বিভিন্ন কম্পাঙ্কের শব্দোত্তর তরঙ্গ সৃষ্টি করে। এ তরঙ্গ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সামনে যদি কোনো প্রতিকথক থাকে, তাহলে তাকে বাধা পেয়ে এ তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়ে বাদুড়ের কানে ফিরে আসে।
বাদুড় তার সৃষ্ট শব্দোত্তর তরঙ্গ এবং প্রতিধ্বনি শোনার মধ্যকার সময়ে ব্যবধান ও প্রতিফলিত শব্দের প্রকৃতি থেকে প্রতিবন্ধকের অবস্থান এবং আকৃতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করে এবং পথ চলার সময় সেই প্রতিবন্ধক পরিহার করে। যেদিকে শব্দোত্তর তরঙ্গের প্রতিধ্বনি শুনতে পারে না, যে দিকে কোনো প্রতিবন্ধক নেই বিবেচনা করে বাদুড় সে দিকে চলে।
শব্দ দূষণ (Sound pollution) : শব্দের আধিক্য আমাদের দেহ ও মনের ওপর যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তাকেই শব্দ দূষণ বলে।
দূষণের কারণ:
১.সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে শহর, বন্দর, নগর সৃষ্টির ফলে অতিরিক্ত শব্দের সৃষ্টি হয়। ফলে শব্দ দূষণ হয়।
২.উচ্চ শব্দে রেডিও বা লাউড স্পিকারে গান বাজালে শব্দ দূষণ হয়।
৩.শিল্প কারখানায় বিভিন্ন যন্ত্র থেকে উৎপন্ন শব্দ, শব্দ দূষণ সৃষ্টি করে।
শব্দ দূষণরোধ:
১. শব্দ দূষণ রোধের জন্য সুস্থ মানসিকতা ও উন্নত দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন।
২. অহেতুক শব্দ সৃষ্টি, যেমন- মাইক, রেডিও, টিভি, গাড়ির হর্ন ইত্যাদি জোরে বাজানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সুএসমূহ হলো:
এই অধ্যায়ের সকল নোট এর পিডিএফ পেতে এখানে ক্লিক করুন ---