অষ্টম অধ্যায়
আলোর প্রতিফলন
LECTURE SHEET
আলোর প্রতিফলন (Reflection of Light): আলো যখন বায়ু বা অন্য মাধ্যমের ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময় অন্য কোনো মাধ্যমে বাধা পায় তখন দুই মাধ্যমের বিভেদতল থেকে কিছু পরিমাণ আলো প্রথম মাধ্যমে ফিরে আসে। একে আলোর প্রতিফলন বলে।
আলোর নিয়মিত প্রতিফলন (Regular Reflection of Light) : যদি একগুচ্ছ সমান্তরাল আলোকরশ্মি কোনো পৃষ্ঠে আপতিত হয়ে প্রতিফলনের পর রশ্মিগুচ্ছ যদি সমান্তরাল থাকে বা অভিসারী বা অপসারীগুচ্ছে পরিণত হয় তবে আলোর সেই প্রতিফলনকে নিয়মিত প্রতিফলন বলে।
প্রতিফলক পৃষ্ঠ মসৃণ হলে এবং সমতল দর্পণে আলোর নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে। এক্ষেত্রে প্রত্যেকটি আলোক রশ্মির আপতন কোণ সমান হয় এবং প্রতিফলন কোণগুলোও সমান হয়।
আলোর ব্যান্ড/বিকৃত/ব্যাপ্ত প্রতিফলন (Diffused Reflection of Light) : যদি একগুচ্ছ সমান্তরাল আলোকরশ্মি কোনো পৃষ্ঠে আপতিত হয়ে প্রতিফলনের পর আর সমান্তরাল থাকে না বা অভিসারী বা অপসারীগুচ্ছে পরিণত হয় না তখন আলোর সেই প্রতিফলনকে ব্যান্ড/বিকৃত/ব্যাপ্ত প্রতিফলন বলে।
*প্রতিফলক পৃষ্ঠ মসৃণ না হলে এরুপ ঘটে। এক্ষেত্রে সমান্তরাল রশ্মিগুলো প্রতিফলক পৃষ্ঠের বিভিন্ন বিন্দুতে বিভিন্ন কোণে আপতিত হয়। ফলে তাদের প্রতিফলন কোণও বিভিন্ন হয়। এতে প্রতিফলিত রশ্মিগুলো আর সমান্তরাল থাকে না, বিকৃতভাবে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
দর্পণ (Mirror): যে মসৃণ তলে আলোর নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে তাকে দর্পণ বলে। অথবা, যে মসৃণ তল থেকে আলোকরশ্মি প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে তাকে দর্পণ (Mirror) বলে।
যেমন : চকচকে ধাতব পাত, পলিশ করা টেবিল সবই দর্পণ হিসেবে কাজ করে।
সমতল দর্পণ ( Plane Mirror) : কোনো সমতল পৃষ্ঠ যদি মসৃণ হয় এবং তাতে আলোর নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে তবে তাকে সমতল দর্পণ বলে। আমরা প্রত্যহ চেহারা দেখার জন্য যে আয়না ব্যবহার করি সেটি সমতল দর্পণ।
গোলীয় দর্পণ (Spherical Mirror) : যে দর্পণের প্রতিফলক পৃষ্ঠ কোনো গোলকের অংশ বিশেষ তাকে গোলীয় দর্পণ বলে।
প্রতিবিম্ব (Image ) : কোনো একটি বিন্দু হতে কতকগুলো আলোকরশ্মি গমন করে কোনো একটি তলে পতিত হওয়ার পর যদি প্রতিফলিত বা প্রতিসৃত রশ্মিগুলো কোনো একটি বিন্দুতে মিলিত হয় বা কোনো একটি বিন্দু থেকে অপসৃত হচ্ছে বলে মনে হয় তবে ঐ দ্বিতীয় বিন্দুটিকে প্রথম বিদুর প্রতিবিম্ব বলা হয়।
বাস্তব প্রতিবিম্ব (Real Image) : কোনো বিন্দু হতে নিঃসৃত আলোকরশ্মিগুচ্ছ কোনো তলে প্রতিফলিত বা প্রতিসরিত হবার পর যদি দ্বিতীয় কোনো বিন্দুতে প্রকৃতপক্ষে মিলিত হয় তাহলে ঐ দ্বিতীয় বিন্দুটিকে প্রথম বিন্দুর বাস্তব প্রতিবিম্ব বলে।
অবাস্তব প্রতিবিম্ব (Unreal Image ) : কোনো কিছু হতে নিঃসৃত আলোকরশ্মিগুচ্ছ কোনো তলে প্রতিফলিত বা প্রতিসরিত হবার পর যদি দ্বিতীয় কোনো বিন্দু থেকে অপসারিত হচ্ছে বলে মনে হয়, তবে ঐ দ্বিতীয় বিন্দুটিকে প্রথম বিন্দুর অবাস্তব প্রতিবিম্ব বলে।
সমতল দর্পণে প্রতিবিম্বের বৈশিষ্ট্য:
১. দর্পণ থেকে বস্তূ ও বিম্বের দূরত্ব সমান।
২. বস্তূ ও বিম্ব যে সরলরেখায় অবস্থিত, সেটি দর্পণকে লম্বভাবে ছেদ করে।
৩. বিম্ব সোজা ও অসদ ।
৪. বিম্বের পার্শ্ব পরিবর্তন ঘটে।
৫. বিশ্বের আকার বস্তুর আকারের সমান।
সরল পেরিস্কোপ (Simple Periscope ) : দূরের কোনো জিনিস বা বস্তূ সরাসরি বা সোজাসুজি দেখতে বাধা থাকলে যে যন্ত্রের সাহায্যে ঐ বস্তূটিকে দেখা যায় তাকে পেরিস্কোপ বলে।
অবতল দর্পণ (Concave Mirror) : কোনো ফাঁপা গোলকের ভিতরের পৃষ্ঠের কিছু অংশ যদি মসৃণ হয় এবং তাতে আলোর নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে অর্থাৎ গোলকের অবতল পৃষ্ঠ যদি প্রতিফলকের ন্যায় কাজ করে তাকে তাকে অবতল দর্পণ বলে।
উত্তল দর্পণ (Convex Mirror) : কোনো ফাঁপা গোলকের বাইরের পৃষ্ঠের কিছু অংশ যদি মসৃণ হয় এবং তাতে আলোর নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে অর্থাৎ গোলকের উত্তল পৃষ্ঠ যদি প্রতিফলকরুপে কাজ করে তবে তাকে উত্তল দর্পণ বলে।
মেরু (Pole) : গোলীয় দর্পণে প্রতিফলক তলের মধ্যবিন্দুকে দর্পণের মেরব বলে। একে সাধারণত A বা P দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
বক্রতার কেন্দ্র (Centre of Curvature ) : গোলকীয় দর্পণ যে গোলকের অংশবিশেষ সেই গোলকের কেন্দ্রকে ঐ দর্পণের বক্রতার কেন্দ্র বলা হয়।
বক্রতার ব্যাসার্ধ (Radius of Curvature) : কোনো একটি গোলীয় দর্পণের মেরুবিন্দু এবং বক্রতার কেন্দ্রের মধ্যবর্তী দূরত্বকে ঐ গোলীয় দর্পণের বক্রতার ব্যাসার্ধ বলে। এটিকে r দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
প্রধান অক্ষ (Principal Axis) : গোলীয় দর্পণের মেরু এবং বক্রতার কেন্দ্রের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত
সরলরেখাকে ঐ দর্পণের প্রধান অক্ষ বলে।
গৌণ অক্ষ (Secondary Axis) : মেরু বিন্দু ব্যতীত দর্পণের প্রতিফলক পৃষ্ঠের উপরস্থ যেকোনো বিন্দু ও বক্রতার কেন্দ্রের মধ্যদিয়ে গমনকারী সরলরেখাকে গৌণ অক্ষ বলে।
ফোকাস দূরত্ব (Focal length) : গোলীয় দর্পণের মেরু বিন্দু এবং প্রধান ফোকাসের মধ্যবর্তী দূরত্বকে এর ফোকাস দূরত্ব বলে। একে f দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
প্রধান ফোকাস (Principal Focal) : গোলীয় দর্পণে আপতিত প্রধান অক্ষের নিকটবর্তী সমান্তরাল রশ্মিগুচ্ছ প্রতিফলনের পর প্রধান অক্ষের ওপর যে বিন্দুতে মিলিত হয় (অবতল দর্পণে) বা যে বিন্দু থেকে অপসৃত হয় বলে মনে হয় (উত্তল দর্পণে) তাকে প্রধান ফোকাস বলে।
রৈখিক বিবর্ধন (Linear Magnification) : প্রতিবিম্বের দৈর্ঘ্য ও লববস্তুর দৈর্ঘ্যের অনুপাতকে রৈখিক বিবর্ধন বলে। প্রতিবিম্ব লক্ষ্যবস্তুর তুলনায় কতগুণ বড় বা ছোট রৈখিক বিবর্ধন দ্বারা বোঝা যায় । কোনো লক্ষ্যবস্তূর দৈর্ঘ্য (l) এবং প্রতিবিম্বের দৈর্ঘ্য (l')। হলে,
রৈখিক বিবর্ধন, m= প্রতিবিম্বের দৈর্ঘ্য (l) / লক্ষ্যবস্তুর দৈর্ঘ্য (l')
দর্পণ চেনার উপায় (Identification of Mirror) : কোনো দর্পণের একেবারে নিকটে একটি আঙুল খাড়াভাবে স্থাপন করলে যদি বিম্ব লক্ষ্যবস্তুর চেয়ে বড় হয় তাহলে দর্পণটি অবতল, আর যদি ছোট হয় তাহলে দর্পণটি উত্তল এবং বিম্ব লক্ষ্যবস্তুর সমান হলে দর্পণটি সমতল হবে।
এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রশ্নের উত্তর :
প্রশ্ন-৫ :অবতল দর্পণে কীভাবে বাস্তব প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হয় তা রশ্মি চিত্রের সাহায্যে দেখাও।
উত্তর : O বিন্দু থেকে একটি রশ্মি OM প্রধান অক্ষের সমান্তরালে দর্পণের M বিন্দুতে আপতিত হয়ে প্রধান ফোকাসের মধ্য দিয়ে MI পথে
প্রতিফলিত হয়। O হতে অপর একটি রশ্মি OCM' বক্রতার কেন্দ্র C বরাবর দর্পণে আপতিত হয়ে প্রতিফলনের পর সেটি একই পথে ফিরে যায়। প্রতিফলনের পর রশ্মি দুটি I বিন্দুতে প্রকৃতপক্ষে মিলিত হয়। সুতরাং I হলো O বিন্দুর বাস্তব প্রতিবিম্ব। A থেকে প্রধান অক্ষ বরাবর আপতিত রশ্মি ঐ পথেই ফিরে যায়। ফলে A-এর প্রতিবিম্ব ঐ রেখার উপরই হবে। I থেকে প্রধান অক্ষের উপর IB লম্ব অঙ্কন করি। BI-ই হলো লক্ষ্যবস্তু OA-এর বাস্তব প্রতিবিম্ব। প্রতিবিম্বের প্রকৃতি হলো বাস্তব ও উল্টো।
প্রশ্ন- ৬ : অবতল দর্পণে কীভাবে অবাস্তব প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হয় তা চিত্রসহ বর্ণনা কর।
উত্তর : চিত্রে লক্ষবস্তু প্রধান ফোকাস এবং মেরুর মধ্যে অবস্থিত। O বিন্দু থেকে একটি রশ্মি প্রধান অক্ষের সমান্তরালে আপতিত হয়ে প্রধান ফোকাসের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয় এবং অপর একটি রশ্মি বক্রতার ব্যাসার্ধ বরাবর দর্পণে আপতিত হয়ে প্রতিফলনের পর সেটি একই পথে ফিরে যায়। প্রতিফলনের ফলে রশ্মি দুটি পরস্পর অপসারী রশ্মিতে পরিণত হয়। রশ্মি দুটিকে পেছনের দিকে বাড়ালে এরা I বিন্দু থেকে আসছে বলে মনে হয়। অর্থাৎ, I বিন্দুই হলো O বিন্দুর অবাস্তব প্রতিবিম্ব। I বিন্দু থেকে প্রধান অক্ষের উপর অঙ্কিত IB লম্ব টানা হলো। সুতরাং BI হলো বস্তুর অবাস্তব ও সোজা প্রতিবিম্ব।
এই অধ্যায়ের সকল নোট এর পিডিএফ পেতে এখানে ক্লিক করুন ---