রসায়ন (তৃতীয় অধ্যায়)
পদার্থের গঠন (Structure of Matter)
LECTURE SHEET
আর্নেস্ট রাদারফোর্ড (১৮৭১ - ১৯৩৭): ১৯১১ সালে আলফা কণা পরীক্ষার সাহায্যে নিউক্লিয়াস আবিষ্কার করেন। পরমাণুর নিউক্লিয়াস প্রোটন ও নিউট্রন নিয়ে গঠিত। পরমাণুর সমস্ত তর নিউক্লিয়াসে আছে বলে মনে করা হয়।
তিনি বলেন- "সূর্যের মতো পরমাণুর নিউক্লিয়াস স্থির এবং সূর্যের চারদিকে গ্রহের মতো ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াসেকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে।"
জেনে রাখ
১. রসায়নের প্রতিটি মৌলের পরমাণুকে একটি প্রতীকের সাহায্যে প্রকাশ করা হয়।
২. মৌলের প্রতীককে ইংরেজি বর্ণমালার একটি বর্ণ বা দুইটি বর্ণের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
৩. মৌলের ইংরেজি নামের প্রথম বর্ণের প্রতীক- H (Hydrogen) B (Boron), C (Carbon), O(Oxygen)
৪. মৌলের ইংরেজি নামের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ণের প্রতীক- Al (Aluminium), Co (Cobalt ), Br (Bromine ), Ni (Nickel)
৫. মৌলের ইংরেজি নামের প্রথম ও তৃতীয় বর্ণের প্রতীক- Cl (Chlorine), Zn (Zinc), Cr (Chromium), Mn (Manganese)
৬.কোনো কোনো মৌলের প্রতীক তার ইংরেজি নাম থেকে না লিখে ল্যাটিন নাম থেকে লেখা হয়। যেমন : Na (ল্যাটিন নাম Natrium, ইংরেজি নাম Sodium), Cu (ল্যাটিন নাম Cuprum, ইংরেজি নাম Copper), K (ল্যাটিন নাম Kalium, ইংরেজি নাম Potassium), Pb (ল্যাটিন নাম Plumbum, ইংরেজি নাম Lead)
জেনে রাখ
১.পরামাণুতে প্রোটন, ইলেকট্রন ও নিউট্রন এই তিনটি স্থায়ী কণিকা বিদ্যমান।
২.পরমাণুতে প্রোটন ও ইলেকট্রন সংখ্যা সমান থাকে তবে নিউট্রন সংখ্যা কখনো সমান আবার কখনো বেশি থাকে।
৩. পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে নিউক্লিয়াস। এতে অবস্থান করে প্রোটন ও নিউট্রন। এদের সমষ্টিকে নিউক্লিয়ন সংখ্যা বা ভরসংখ্যা বলা হয়।
৪.পরমাণুর প্রোটন সংখ্যাকে বলা হয় পারমাণবিক সংখ্যা যা তার নিজ সত্তা বা পরিচয়।
৫. প্রোটন ধনাত্মক আধান বিশিষ্ট, ইলেকট্রন ঋণাত্মক আধান বিশিষ্ট আর নিউট্রন আধান নিরপেক্ষ।
৬. প্রোটনের প্রতীক p, নিউট্রনের প্রতীক n আর ইলেকট্রনের প্রতীক e। প্রোটন ও নিউট্রনের আপেক্ষিক ভর সমান।
জেনে রাখ
১.সকল মৌলেরই নিজস্ব প্রোটন সংখ্যা এবং নিউক্লিয়ন সংখ্যা আছে।
২.প্রোটন সংখ্যাকে পারমাণবিক সংখ্যা বলা হয়।
৩.প্রোটন সংখ্যা ও নিউট্রন সংখ্যার সমষ্টিকে ভরসংখ্যা বা নিউক্লিয়ন সংখ্যা বলা হয়। পারমাণবিক সংখ্যাকে Z ধারা ও ভরসংখ্যাকে A যারা প্রকাশ করা হয়।
জেনে রাখ
১.বিভিন্ন ভরসংখ্যাবিশিষ্ট একই মৌলের পরমাণুকে পরস্পরের আইসোটোপ বলে।
২.একই মৌলের পরমাণুর প্রোটন বা ইলেকট্রন সংখ্যা পরিবর্তন হয় না কিন্তু নিউট্রন সংখ্যার পরিবর্তন হয়। এই নিউট্রনের সংখ্যার পরিবর্তনের কারণেই আইসোটোপ সৃষ্টি হয়। হাইড্রোজেনের 7টি আইসোটোপ (¹H, ²H, ³H, ⁴H, ⁵H, ⁶H, ⁷H) আছে। এদের মধ্যে তিনটি প্রকৃতিতে পাওয়া অবশিষ্ট চারটি গবেষণাগারে সংরক্ষণ করা হয়।
জেনে রাখ
১.আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর হলো আইসোটোপসমূহের শতকরা পর্যাপ্ততার পরিমাণের গড়।
২.বিজ্ঞানীরা কার্বন 12 আইসোটোপের ভরের 1/12 অংশকে পারমাণবিক ভরের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
৩.আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর একটি অনুপাত বলে এর কোনো একক থাকে না।
৪.পর্যায় সারণিতে পরমাণুসমূহের যে পরমাণবিক ভর দেওয়া হয়েছে তা আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর। কোনো পরমাণুর আইসোটোপ না থাকলে সেগুলোর আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর ও ভরসংখ্যা সমান হয়।
জেনে রাখ
১.আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর থেকে আপেক্ষিক আণবিক ভর নির্ণয় করা যায়। যৌগের আণবিক সংকেতে বিদ্যমান প্রতিটি মৌলের পরমাণুর পারমাণবিক ভর ও পরমাণু সংখ্যার গুণফলের সমষ্টিই হলো ঐ যৌগের মোট আণবিক ভর।
জেনে রাখ
২. 2n² সূত্রানুযায়ী K, L, M ও N শেলে ইলেকট্রন ধারণক্ষমতা যথাক্রমে 2, 8, 18ও 32টি।
৩. 1থেকে 18 পারমাণবিক সংখ্যাবিশিষ্ট মৌলসমূহ 2n² সূত্র মেনে চলে।
৪. নিম্ন শক্তিস্তর ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ হলে পরবর্তী শক্তিস্তরে ইলেকট্রন গমন করে।
৫. K(1s), L(2s, 2p), M(3s, 3p, 3d), N(4s, 4p, 4d, 4f) এসব উপশক্তিস্তরে প্রধান শক্তিস্তর বিভক্ত।
৬. পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাসের সময় ইলেকট্রনসমূহ বিভিন্ন অরবিটালে তাদের শক্তির নিম্নক্রম থেকে উচ্চক্রম অনুসারে প্রবেশ কর।
৭. পরমাণুর স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য ইলেকট্রনসমূহ বিভিন্ন অরবিটালে সজ্জিত হয়।
৮.অরবিটালসমূহের শক্তিক্রম হলো: 1s< 2s< 2p< 3s< 3p< 4s< 3d <4p <5s <4d <5p< 6s< 4f< 5d< 6p< 7s< 5f< 6d< 7p< 8s
মৌল: যে পদার্থকে বিশ্লেষণ করলে ঐ পদার্থ থেকে মূল পদার্থ ছাড়া পৃথক ধর্মবিশিষ্ট অন্য কোনো নতুন পদার্থ পাওয়া যায় না, তাকে মৌল বা মৌলিক পদার্থ বলে। নাইট্রোজেন, ফসফরাস, কার্বন, অক্সিজেন, হিলিয়াম, ক্যালসিয়াম, আর্গন, ম্যাগনেসিয়াম, সালফার প্রভৃতি মৌলিক পদার্থ।
প্রতীক: কোনো মৌলের নাম যা দ্বারা সংক্ষেপে প্রকাশ করা হয়, তাকে প্রতীক বলে। যেমন ব্রোমিন (Bromine) এর প্রতীক Br, বোরন (Boron) এর প্রতীক B ইত্যাদি।
মৌলিক কণিকা: যেসব সূক্ষ্ম কণিকা যারা পরমাণু গঠিত, তাদেরকে মৌলিক কণিকা বলা হয়। এরা হচ্ছে ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন। এ তিনটি কণিকা বিভিন্ন সংখ্যায় একত্রিত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন পরমাণু সৃষ্টি করে।
ইলেকটন: সব পদার্থের পরমাণুর সাধারণ উপাদান হলো ইলেকট্রন। ইলেকট্রন পরমাণুর সবচেয়ে হালকা কণিকা। ইলেকট্রনসমূহ নিজস্ব শক্তি অনুযায়ী নিউক্লিয়াসের বাইরে চারদিকে বিভিন্ন কক্ষপথে ঘূর্ণায়মানভাবে অবস্থান করে। এটি ঋণাত্মক আধানযুক্ত এবং এর আপেক্ষিক আধানকে -1 ধরা হয়। ইলেকট্রনকে e দ্বারা প্রকাশ করা হয়। একটি ইলেকট্রনের ভর 9.11 x 10⁻²⁸ গ্রাম; আধান বা চার্জ 1.60 x 10⁻¹⁹ কুলম্ব ; একটি ইলেকট্রনের ভর একটি প্রোটন বা একটি নিউট্রনের ভরের 1/1840 গুণ।
প্রোটন: পরমাণুর আর একটি মূল উপাদান প্রোটন। প্রোটনের ভর ইলেকট্রনের চেয়ে প্রায় 1840 গুণ বেশি। প্রোটন পরমাণুর কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াসে অবস্থান করে। এটি ধনাত্মক আধানযুক্ত এবং এর আপেক্ষিক আধানকে +1 ধরা হয়। প্রোটনকে p চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়। একটি প্রোটনের ভর 1.67 x 10⁻²⁴ গ্রাম, আধান বা চার্জ +1.60 x 10⁻¹⁹ কুলম্ব।
নিউট্রন: নিউট্রন পরমাণুর কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াসে থাকে। প্রোটন ও নিউট্রনের আপেক্ষিক ভর সমান। এটি চার্জ নিরপেক্ষ এবং আপেক্ষিক ভর 1 ধরা হয়। নিউট্রনকে n চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়। নিউট্রনের ভর 1.675 × 10⁻²⁴ গ্রাম। একই মৌলের বিভিন্ন পরমাণুর মধ্যে নিউট্রনের সংখ্যার বিভিন্নতার কারণে আইসোটোপ সৃষ্টি হয়।
পারমাণবিক সংখ্যা: কোনো মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াস বা কেন্দ্রে যতসংখ্যক প্রোটন থাকে, সেই সংখ্যাকে ঐ মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা বলে। এটি একটি পরমাণুর নিজস্ব সত্তা বা তার পরিচয়। সাধারণত মৌলের প্রতীকের বামপাশে নিচের দিকে প্রোটন সংখ্যা তথা পারমাণবিক সংখ্যা লেখা হয়। একে Z দ্বারা প্রকাশ করা হয়। হিলিয়ামে 2টি প্রোটন আছে। সুতরাং এর পারমাণবিক সংখ্যা 2। তাই হিলিয়ামকে ₂He লিখে প্রকাশ করা হয়।
ভর সংখ্যা: পরমাণুর নিউক্লিয়ন সংখ্যাই তার ভর সংখ্যা। কোনো মৌলের একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যে প্রোটন এবং নিউট্রনের মোট সংখ্যাকে ঐ মৌল বা পরমাণুর ভর সংখ্যা বলে। অর্থাৎ ভর সংখ্যা = প্রোটন সংখ্যা + নিউট্রন সংখ্যা। একে A যারা প্রকাশ করা হয়। এটিকে মৌলের প্রতীকের বামপাশে ওপর দিকে লিখতে হয়। যেমন, ইউরেনিয়ামের ভর সংখ্যা 238। সুতরাং, একে ²³⁸U লিখে প্রকাশ করা হয়।
আইসোটোপ: একই মৌলের বিভিন্ন পরমাণু যাদের পারমাণবিক সংখ্যা বা প্রোটন সংখ্যা একই, কিন্তু ভর সংখ্যা বিভিন্ন হয়, তাদের আইসোটোপ বলে। নিউট্রন সংখ্যার ভিন্নতার কারণে এমন হয়। যেমন: প্রকৃতিতে হাইড্রোজেনের তিনটি আইসোটোপ আছে। এদের নাম হাইড্রোজেন, ডিউটেরিয়াম ও ট্রিটিয়াম। এদের ভর সংখ্যা যথাক্রমে 1, 2 ও 3। এদের প্রত্যেকের নিউক্লিয়াসে 1টি করে প্রোটন বিদ্যমান অর্থাৎ প্রত্যেকের পারমাণবিক সংখ্যা 1। কিন্তু এদের নিউক্লিয়াসে নিউট্রনের সংখ্যা প্রথমটিতে নেই, দ্বিতীয়টিতে 1 এবং তৃতীয়টিতে 2। এজন্য তিন রকম হাইড্রোজেন পরমাণু পাওয়া যায়।
আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর: কোনো মৌলের আইসোটোপগুলোর শতকরা পর্যাপ্ততার পরিমাণকে গড় করলে যে ভর পাওয়া যায় তাকে ঐ মৌলের আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর বলে। সাধারণ অবস্থায় মৌলের আইসোটোপগুলো এমন অনুপাতে থাকে যে, এগুলোর ভরের গড় হিসেবে পারমাণবিক ভর পূর্ণসংখ্যার না হয়ে ভগ্নাংশ হয়। যেমন- ক্লোরিনের দুটি আইসোটোপ হলো ³₁⁵₇Cl এবং ³₁⁷₇Cl। এদের প্রত্যেকের ভর পূর্ণসংখ্যার হয়। কিন্তু পর্যাপ্ততার দিক থেকে এদের শতকরা পরিমাণ যথাক্রমে 75% এবং 25%। তাই ক্লোরিনের আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর 35.5।
আপেক্ষিক আণবিক ভর: কোনো পদার্থের অণুতে বিদ্যমান পরমাণুসমূহের আপেক্ষিক পারমাণবিক ভরের সমষ্টিকে আপেক্ষিক আনবিক ভর বলা হয়। যেমন: অক্সিজেনের আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর 16। একটি অক্সিজেন অনু অক্সিজেনের 2টি পরমাণু নিয়ে গঠিত। সুতরাং অক্সিজেনের আপেক্ষিক আণবিক ভর হবে 16 × 2 = 32৷
পরমাণু পরিচিতি: কোনো পরমাণুর প্রতীকের বাম পাশে উপরের দিকে তার ভর সংখ্যা এবং বাম পাশে নিচের দিকে তার পারমাণবিক সংখ্যা লেখা হয়। যেমন: ²₁⁷₃Al এর অর্থ অ্যালুমিনিয়ামের একটি পরমাণুর ভর সংখ্যা 27 এবং পারমাণবিক সংখ্যা 13। সুতরাং এর নিউট্রন সংখ্যা = 27-13 =14।
তেজস্ক্রিয়তা: কিছু কিছু পদার্থ আছে যা থেকে আপনা-আপনি কিছু রশ্মি যেমন- 𝛼 (আলফা), β (বিটা), γ (গামা) অনবরত নির্গত হয়। এ ধরনের বিশেষ গুণবিশিষ্ট রশ্মিকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি এবং যেসব পদার্থ থেকে এসব রশ্মি বের হয়, তাদের তেজস্ক্রিয় পদার্থ বলে। আর, তেজস্ক্রিয় পদার্থের এ ধরনের রশ্মি বিকিরণের বৈশিষ্ট্যকে তেজস্ক্রিয়তা বলে।
তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ: প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উপায়ে তৈরি সুস্থিত ও অস্থিত আইসোটোপগুলোর মধ্যে অস্থিত আইসোটোপগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন ধরনের রশ্মি বিকিরণ করে অন্য মৌলের আইসোটোপে পরিণত হয়। এই ধরনের আইসোটোপগুলোকে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে এসব মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াসে পরিবর্তন ঘটে।
পরমাণুর মডেল: 1911 সালে বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড ও 1913 সালে বিজ্ঞানী নীলস বোর পরমাণুর গঠন বর্ণনা করার জন্য পরমাণু মডেল প্রদান করেন।
(ক)রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল: বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড 1911 সালে আলফা কণা বিচ্ছুরণ পরীক্ষার সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে পরমাণুর গঠনকে একটি ক্ষুদ্র সৌরজগতের সঙ্গে তুলনা করেন। এ কারণে তাঁর প্রস্তাবিত পরমাণু মডেলকে পরমাণুর সৌর মডেলও বলা হয়। এর মূল বক্তব্য হলো--
১. পরমাণুর কেন্দ্রস্থলে একটি ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট ভারী বস্তু বিদ্যমান। এই ভারী বস্তুকে পরমাণুর কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস বলা হয়। পরমাণুর মোট আয়তনের তুলনায় নিউক্লিয়াসের আয়তন অতি নগণ্য। নিউক্লিয়াসে পরমাণুর সমস্ত ধনাত্মক চার্জ ও প্রায় সমস্ত ভর কেন্দ্রীভূত।
২. পরমাণু বিদ্যুৎ নিরপেক্ষ। অতএব, নিউক্লিয়াসের ধনাত্মক চার্জযুক্ত প্রোটন সংখ্যার সমান সংখ্যক ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রন পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে পরিবেষ্টন করে রাখে।
৩. সৌরজগতের সূর্যের চারদিকে ঘূর্ণায়মান গ্রহসমূহের মতো পরমাণুর ইলেক্ট্রনগুলো নিউক্লিয়াসের চারদিকে অবিরাম ঘুরছে। ধনাত্মক চার্জ বিশিষ্ট নিউক্লিয়াস ও ঋনাত্মক চার্জ বিশিষ্ট ইলেকট্রনসমূহের মধ্যে পারস্পরিক স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষণজনিত কেন্দ্রমুখী বল এবং ঘূর্ণায়মান ইলেকট্রনের কেন্দ্রবহির্মুখী বা পরস্পর সমান।
(খ) বোর-এর পরমাণু মডেল: 1913 সালে নীলস বোর তাঁর বিখ্যাত পরমাণু মডেল প্রকাশ করেন। এ মডেলের স্বীকার্যসমূহ হলো :
১. নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে বৃত্তাকার পথে ইলেকট্রনসমূহ ঘুরতে থাকে।
২. নিউক্লিয়াসের চারদিকে বৃত্তাকার কতগুলো স্থির কক্ষপথ আছে যাতে অবস্থান নিয়ে ইলেকট্রনসমূহ ঘুরতে থাকে। এগুলোকে শক্তিস্তর বা অরবিট বলা হয়। শক্তিস্তরসমূহকে কল্পিত সংখ্যা n এর মান অনুসারে K, L, M, N দ্বারা প্রকাশ করা হয়। প্রথম শক্তিস্তরকে n = 1 (K শক্তিস্তর), ২য় শক্তিস্তরকে n=2 (L শক্তিস্তর) এভাবে n=3.4.5 ইত্যাদি পূর্ণসংখ্যা মানে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং শক্তিস্তরসমূহকে যথাক্রমে M, N, O দ্বারা প্রকাশ করা যায়। একটি নির্দিষ্ট শক্তিস্তরে অবস্থানকালে ইলেকট্রনসমূহ শক্তি শোষণ অথবা বিকিরণ করে না।
৩. যখন কোনো ইলেকট্রন একটি নিম্নতর কক্ষপথ বা শক্তিস্তর যেমন n= 1 থেকে উচ্চতর কক্ষপথ n = 2 তে স্থানান্তরিত হয় তখন নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি শোষণ করে। আবার যখন কোনো উচ্চতর শক্তিস্তর যেমন n = 2 থেকে নিম্নতর কক্ষপথ n = 1-এ স্থানান্তরিত হয়, তখন শক্তি বিকিরণ করে।
পরমাণুতে ইলেকট্রন বিন্যাসের আধুনিক নিয়ম: পরমাণুতে নিউক্লিয়াসের চারদিকে কতগুলো কক্ষপদ বা শক্তিস্তর বা শেল থাকে, যাদের অরবিট করা হয়। এদের নাম K, L, M, N, O, P ও Q ইত্যাদি।
K, L, M, N ইত্যাদি শক্তিস্তর আবার কতগুলো অরবিটাল বা উপশক্তিস্তরে বিভক্ত থাকে। যেমন:
K শক্তিস্তরে বা ১ম শক্তিস্তরে ১টি উপশক্তিস্তর থাকে যার নাম 1s
L শক্তিস্তরে বা ২য় শক্তিস্তরে ২টি উপশক্তিস্তর থাকে যাদের নাম 2s, 2p
M শক্তিস্তরে বা ৩য় শক্তিস্তরে ৩টি উপশক্তিস্তর থাকে যাদের নাম 3s, 3p, 3d
N বা ৪র্থ শক্তি স্তর থেকে শুরু করে উচ্চ শক্তিস্তর প্রত্যেকটিতে ৪টি করে উপশক্তিস্তর থাকে, যাদের নাম 4s, 4p, 4d, 4f
অর্থাৎ, s উপশক্তিস্তরে অরবিটাল ১টি, p উপশক্তিস্তরে অরবিটাল ৩টি, d উপশক্তিস্তরে অরবিটাল ৫টি, f উপশক্তিস্তরে অরবিটাল ৭টি।
প্রতিটি অরবিটালে সর্বোচ্চ ২টি ইলেকট্রন থাকতে পারে আবার ১টিও থাকতে পারে, নাও থাকতে পারে।
প্রতিটি প্রধান শক্তিস্তরের সর্বোচ্চ ইলেকট্রন ধারণক্ষমতা 2n² যেখানে, n = 1, 2, 3, 4 ..... ইত্যাদি। 2n² সূত্রানুসারে--
K শেলের ইলেকট্রন ধারণক্ষমতা, 2 × 1² = 2টি
L শেলের ইলেকট্রন ধারণক্ষমতা, 2 × 2² = 8টি
M শেলের ইলেকট্রন ধারণক্ষমতা, 2 × 3² = 18টি
N শেলের ইলেকট্রন ধারণক্ষমতা, 2 × 4² = 32টি ইত্যাদি।
পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাসের সময় ইলেকট্রনসমূহ বিভিন্ন অরবিটালে (উপশক্তিস্তরে) তাদের শক্তির নিম্নক্রম থেকে উচ্চক্রম অনুসারে প্রবেশ করে। স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য প্রথমে নিম্নশক্তি অরবিটালে ইলেকট্রন গমন করে এবং অরবিটাল পূর্ণ করে, এরপর ক্রমান্বয়ে উচ্চশক্তির অরবিটাল ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ হয়। অরবিটালসমূহের শক্তিক্রম নিম্নরূপ : 1s →2s →2p →3s →3p →4s →3d →4p →5s →4d →5p →6s →4f →5d →6p →7s →5f →6d →7p < →8s। এই নিয়মটি একটি ছকের মাধ্যমে দেখানো হলো :