নবম অধ্যায়
আলোর প্রতিসরণ
LECTURE SHEET
প্রতিসরণ (Refraction) : আলোকরশ্মি এক স্বচ্ছ মাধ্যম থেকে অন্য স্বচ্ছ মাধ্যমে যাওয়ার সময় মাধ্যমদ্বয়ের বিভেদতলে তির্যকভাবে আপতিত আলোকরশ্মির দিক পরিবর্তন করার ঘটনাকে আলোর প্রতিসরণ বলে।
প্রতিসরণের সূত্র (Laws of Refraction) : আলোর প্রতিসরণ দুটি সূত্র মেনে চলে।
প্রথম সূত্র : আপতিত রশ্মি, প্রতিসরিত রশ্মি এবং আপতন বিন্দুতে বিভেদতলের উপর অঙ্কিত অভিলম্ব একই সমতলে অবস্থান করে।
দ্বিতীয় সূত্র : একজোড়া নির্দিষ্ট মাধ্যম এবং নির্দিষ্ট বর্ণের আলোক রশ্মির ক্ষেত্রে আপতন কোণের সাইন এবং প্রতিসরণ কোণের সাইনের অনুপাত সর্বদা একটা ধ্রুবক। এ ধ্রুবককে (ɳ) দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
অর্থাৎ, যদি আপতন কোণ i এবং প্রতিসরণ কোণ r হয় তবে,
ɳ =sin i /sin r
প্রতিসরণাঙ্ক (Refractive Index) : আলোকরশ্মি যখন এক স্বচ্ছ মাধ্যম থেকে অন্য স্বচ্ছ মাধ্যমে তির্যকভাবে প্রবেশ করে তখন নির্দিষ্ট রঙের আলোর জন্য আপতন কোণের সাইন ও প্রতিসরণ কোণের সাইনের অনুপাত যে ধ্রুবক সংখ্যা হয় তাকে প্রথম মাধ্যমের সাপেক্ষে দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরণাঙ্ক বা আপেক্ষিক প্রতিসরণাঙ্ক বলে।
*a এর সাপেক্ষে c এর প্রতিসরণাঙ্ক হবে,
ₐ𝛍꜀ = 𝛍ₐ / 𝛍꜀
পরম প্রতিসরণাঙ্ক (Absolute Refractive Index) : আলোকরশ্মি যখন শূন্য মাধ্যম থেকে অন্য কোনো মাধ্যমে তির্যকভাবে প্রবেশ করে তখন নির্দিষ্ট রঙের আলোর জন্য আপতন কোণের সাইন ও প্রতিসরণ কোণের সাইনের অনুপাতকে ওই মাধ্যমের পরম প্রতিসরণাঙ্ক বলে। শূন্য মাধ্যমে আপতন কোণ i এবং অন্য কোনো মাধ্যমে প্রতিসরণ কোণ r হলে, মাধ্যমের পরম প্রতিসরণাঙ্ক,
ɳₐ = sin i / sin r
ক্রান্তি কোণ বা সঙ্কট কোণ (Critical Angle) : নির্দিষ্ট রঙের আলোকরশ্মি ঘন মাধ্যম হতে হালকা মাধ্যমে প্রতিসরিত হওয়ার সময় আপতন কোণের যে মানের জন্য প্রতিসরণ কোণের মান সর্বাধিক ( 90° ) হয়,তাকে ক্রান্তি কোণ বলে।
একে সাধারণত 𝚹꜀ দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন (Total Internal Reflection) : আলোকরশ্মি যখন ঘন মাধ্যম থেকে হালকা মাধ্যমে ক্রান্তি কোণের চেয়ে বড় কোণে আপতিত হয়, তখন প্রতিসরণের পরিবর্তে আলোকরশ্মি সম্পূর্ণরুপে ঘন মাধ্যমের অভ্যন্তরে প্রতিফলনের সূত্রানুযায়ী প্রতিফলিত হয়। এ ঘটনাকে পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন বলে।
পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন হওয়ার শর্ত : পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের শর্ত দুটি।
যথা :আলোকরশ্মিকে অবশ্যই ঘন মাধ্যম থেকে হালকা মাধ্যমের অভিমুখে যেতে হবে এবং দুই মাধ্যমের বিভেদতলে আপতিত হতে হবে। ঘন মাধ্যমে আপতন কোণ ক্রান্তি কোণের চেয়ে বড় হতে হবে।
মরীচিকা (Mirage) : মরুভূমিতে পথচারীর কাছে প্রায়ই মনে হয় তার সামনে অল্প দূরত্বে বুঝি পানি আছে। কিন্তু তিনি কখনো সেই পানির কাছে পৌঁছাতে পারেন না, কেননা, এটি একটি আলোকীয় অলৌকিক ঘটনা। এই ঘটনাকেই মরীচিকা বলে। পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের জন্য দৃষ্টিতে যে ভ্রান্তি হয় তাকে মরীচিকা বলে। উত্তপ্ত মরুভূমিতে মরীচিকা সৃষ্টি হয়।
অপটিক্যাল ফাইবার (Optical Fibre) : অপটিক্যাল ফাইবার হচ্ছে খুব সরু এবং নমনীয় কাচ তন্তু। আলো বহনের কাজে এটি ব্যবহৃত হয়। যখন আলোকরশ্মি কাচ তন্তুর একপ্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে তখন তন্তূ দেয়ালে বারবার এর পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন ঘটে, যতণ না অপর প্রান্ত দিয়ে নির্গত হয়। এভাবে আলোকরশ্মি দণ্ডের সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য অতিক্রম করে। একগুচ্ছ অপটিক্যাল ফাইবারকে আলোক নল বলা হয়।
বায়ু সাপেক্ষে পানির প্রতিসরণাঙ্ক 1.33 : বায়ুর সাপেক্ষে পানির প্রতিসরণাঙ্ক 1-33 বলতে বোঝায় যে, আলোকরশ্মি যদি বায়ু মাধ্যম থেকে পানিতে প্রবেশ করে তাহলে আপতন কোণের সাইন ও প্রতিসরণ কোণের সাইনের অনুপাত সর্বদা 1.33 হবে।
কাচের পরম প্রতিসরণাঙ্ক 1.5 এর অর্থ : কাচের পরম প্রতিসরণাঙ্ক 1.5 বলতে বোঝায়, শূন্য মাধ্যম বা বায়ু থেকে আলো কাচে তির্যকভাবে প্রবেশ করলে আপতন কোণের সাইন ও প্রতিসরণ কোণের সাইন-এর অনুপাত 1.5 হয়।
লেন্স (Lens) : দুটি গোলীয় পৃষ্ঠ দ্বারা সীমাবদ্ধ কোনো স্বচ্ছ প্রতিসারক মাধ্যমকে লেন্স বলে। লেন্স প্রধানত দু'রকমের হয়। যথা :
উত্তল বা অভিসারী লেন্স (Convex lens) এবং
অবতল বা অপসারী লেন্স (Concave lens)।
উত্তল বা অভিসারী লেন্স (Convex Lens) : যে লেন্সের মধ্যভাগ মোটা ও প্রান্ত সরু তাকে উত্তল লেন্স বলে। উত্তল লেন্সে আলোকরশ্মি উত্তল পৃষ্ঠে আপতিত হয় বলে তাকে উত্তল লেন্স বলে। এ লেন্সে সাধারণত একগুচ্ছ সমান্তরাল আলোকরশ্মিকে অভিসারী করে বলে তাকে অভিসারী লেন্সও বলা হয়।
চিত্র:উত্তল লেন্স |
অবতল বা অপসারী লেন্স (Concave Lens) : যে লেন্সের মধ্যভাগ সরু ও প্রান্তের দিকে মোটা তাকে অবতল লেন্স বলে। অবতল লেন্সে আলোকরশ্মি অবতল পৃষ্ঠে আপতিত হয় বলে তাকে অবতল লেন্স বলে। এ লেন্স সাধারণত একগুচ্ছ আলোকরশ্মিকে অপসারী করে বলে তাকে অপসারী লেন্সও বলে।
চিত্র:অবতল লেন্স |
প্রধান অক্ষ (Principal axis) : দুটি গোলীয় পৃষ্ঠ দ্বারা লেন্স গঠিত হয়। সুতরাং লেন্সের বক্রতার কেন্দ্র এবং বক্রতার ব্যাসার্ধ দুটি। লেন্সের উভয় পৃষ্ঠের বক্রতার কেন্দ্রের মধ্য দিয়ে গমনকারী সরলরেখাকে প্রধান অক্ষ বলে।
আলোক কেন্দ্র (Optical Centre) : কোনো আলোকরশ্মি যদি কোনো লেন্সের এক পৃষ্ঠে আপতিত হয়ে নির্গত হওয়ার সময় আপতিত রশ্মির সমান্তরালভাবে নির্গত হয় তাহলে সেই রশ্মি লেন্সের প্রধান অক্ষের ওপর যে বিন্দু দিয়ে যায় সেই বিন্দুকে
লেন্সের আলোক কেন্দ্ৰ বলে।
একে C দ্বারা সূচিত করা হয় ।
লেন্সের প্রধান ফোকাস (Principal Focus) : লেন্সের প্রধান অক্ষের সমান্তরাল এবং নিকটবর্তী রশ্মিগুচ্ছ প্রতিসরণের পর প্রধান অক্ষের ওপর যে বিন্দুতে মিলিত হয় (উত্তল লেন্সে) বা যে বিন্দু থেকে
অপসৃত হচ্ছে বলে মনে হয় (অবতল লেন্সে) সেই বিন্দুকে লেন্সের প্রধান ফোকাস বলে।
ফোকাস দূরত্ব (Focal Length) : আলোক কেন্দ্র থেকে লেন্সের প্রধান ফোকাস পর্যন্ত দূরত্বকে লেন্সের ফোকাস দূরত্ব বলে।
ফোকাস তল (Focal Plane) : কোনো লেন্সের প্রধান ফোকাসের মধ্য দিয়ে প্রধান অক্ষের সাথে লম্বভাবে যে সমতল কল্পনা করা যায় তাকে ফোকাস তল বলে।
লেন্সের ক্ষমতা (Power of a Lens) : একগুচ্ছ সমান্তরাল আলোকরশ্মিকে কোনো লেন্সের অভিসারী (উত্তল লেন্সে) গুচ্ছে বা অপসারী (অবতল লেন্সে) গুচ্ছে পরিণত করার সামর্থ্যকে ঐ লেন্সের ক্ষমতা বলে।
ডায়াপ্টার (Dioptre ) : লেন্সের ক্ষমতার প্রচলিত একক হলো ডায়াপ্টার। এক মিটার ফোকাস দূরত্বের কোনো লেন্সের ক্ষমতাকে এক ডায়াপ্টার (d) বলে। লেন্সের ফোকাস দূরত্বকে মিটারে প্রকাশ করে তার বিপরীত রাশি নিলে ডায়াপ্টারে লেন্সের ক্ষমতা পাওয়া যায়। কোনো লেন্সের ফোকাস দূরত্ব f মিটার এবং ক্ষমতা P ডায়াপ্টার হলে,
P = 1 / f
বিম্ব স্থাপন বা চক্ষুর সংযোজন বা চক্ষুর উপযোজন : যেকোনো দূরত্বের বস্তু দেখার জন্য চোখের অক্ষিগোলকে লক্ষবস্তুর প্রতিবিম্ব গঠনের জন্য লেন্সের ফোকাস দূরত্ব নিয়ন্ত্রণ করার প্রক্রিয়াকে বিম্ব স্থাপন বা চক্ষুর সংযোজন বা চক্ষুর উপযোজন বলে।
স্পষ্ট দর্শনের নিকটতম দূরত্ব ও নূন্যতম দূরত্ব : যে নিকটতম দূরত্ব পর্যন্ত চোখ স্পষ্ট দেখতে পায় তাকে স্পষ্ট দর্শনের নিকটতম দূরত্ব বলে।
*সবচেয়ে বেশি যে দূরত্বে কোনো বস্তু থাকলে তা স্পষ্ট দেখা যায় তাকে চোখের স্পষ্ট দর্শনের দূরতম দূরত্ব বলে।
স্পষ্ট দর্শনের নিকটতম দূরত্ব 25 সেমি-এর অর্থ : কোনো বস্তু 25 সেমি দূরে থাকতে সে ব্যক্তির চোখ বিনা বাধায় তা স্পষ্ট দেখতে পাবে।
দর্শনানুভূতির স্থায়িত্বকাল : চোখের সামনে কোনো বস্তু রাখলে রেটিনায় তার বিম্ব গঠিত হয় এবং আমরা বস্তূটি দেখতে পাই। এখন যদি বস্তূটিকে চোখের সম্মুখ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় তাহলে সরিয়ে নেওয়ার 0•1 সেকেন্ড পর্যন্ত এর অনুভূতি মস্তিষ্কে থেকে যায়। এ সময়কে দর্শনানুভূতির স্থায়িত্বকাল বলে।
চোখের ত্রুটি : স্বাভাবিক চোখের দৃষ্টির পাল্লা 25 cm থেকে অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত অর্থাৎ স্বাভাবিক চোখ 25 cm থেকে অসীম দূরত্বের মধ্যে যেকোনো বস্তু স্পষ্ট দেখতে পায়। যদি কোনো চোখ এই পাল্লার মধ্যে কোনো বস্তুকে স্পষ্ট দেখতে না পায় তাহলে সেই চোখ ত্রুটিপূর্ণ ধরা হয়। চোখে প্রধানত দুই ধরনের ত্রুটি দেখা যায়। যথা :
১. হ্রস্ব দৃষ্টি বা মাইওপিয়া (Short Sight or Myopia)
২. দীর্ঘ দৃষ্টি বা হাইপারমেট্রোপিয়া (Long
sight or Hypermetropia)
হ্রস্ব দৃষ্টি বা মাইওপিয়া (Short sight or Myopia) : এই ত্রুটিগ্রস্ত চোখ দূরের জিনিস ভালোভাবে দেখতে পায় না কিন্তু কাছের জিনিস স্পষ্ট দেখতে পায়। এমনকি এই চোখের নিকট বিন্দু 25 cm এরও কম হতে পারে।
চিত্র:হ্রস্ব দৃষ্টি |
কারণ অক্ষিগোলকের ব্যাসার্ধ বেড়ে গেলে বা চোখের লেন্সের ফোকাস দূরত্ব কমে গেলে অর্থাৎ অভিসারী ক্ষমতা বেড়ে গেলে এই ত্রুটি দেখা যায়।
দীর্ঘ দৃষ্টি বা হাইপারমেট্রোপিয়া (Long sight or Hypermetropia) : এই ত্রুটিগ্রস্ত চোখ দূরের জিনিস দেখতে পায় কিন্তু কাছের জিনিস স্পষ্ট দেখতে পায় না।
কারণ : অক্ষিগোলকের ব্যাসার্ধ কমে গেলে বা চোখের লেন্সের ফোকাস দূরত্ব বেড়ে গেলে অর্থাৎ অভিসারী ক্ষমতা কমে গেলে চোখে এই ধরনের ত্রুটি দেখা দেয়।
চিত্র:দীর্ঘ দৃষ্টি |
অ্যাকুয়াস হিউমার (Aqueous humour) : কর্নিয়া ও চক্ষু লেন্সের মধ্যবর্তী স্থান যে স্বচ্ছ লবণাক্ত জলীয় পদার্থে পূর্ণ থাকে তাকে অ্যাকুয়াস হিউমার বলে। অশ্রু বলতে আমরা অ্যাকুয়াস হিউমারকে বুঝি।
এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সুএসমূহ হলো:
এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সকল নোট এর পিডিএফ পেতে এখানে ক্লিক করুন---
Download Now