এস.এস.সি পদার্থবিজ্ঞান
দ্বাদশ অধ্যায়
তড়িতের চৌম্বক ক্রিয়া
LECTURE SHEET
তড়িৎ প্রবাহের চৌম্বক ক্রিয়া : কোনো পরিবাহীর ভেতর দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হলে তার চারপাশে একটি চৌম্বকক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। একে তড়িৎ প্রবাহের চৌম্বক ক্রিয়া বলে।
সলিনয়েড: সলিনয়েড হচ্ছে কাছাকাছি বা ঘন সন্নিবিষ্ট অনেক পেঁচযুক্ত লম্বা বেলনাকার কয়েল বা তার কুণ্ডলী একটি লম্বা অন্তরীত পরিবাহক তারকে স্প্রিংয়ের মতো বহুপাকে ঘনসন্নিবিষ্ট করে সাজালে বা কয়েল তৈরি করলে সলিনয়েড তৈরি হয়।
তাড়িতচুম্বক : সলিনয়েডের ভেতর কোনো লোহার দণ্ড ঢুকিয়ে তড়িৎ প্রবাহ চালনা করলে লোহার দণ্ড চুম্বকে পরিণত হয়। একে তাড়িতচুম্বক বলে। অর্থাৎ, তড়িৎ প্রবাহের ফলে যে চুম্বকের সৃষ্টি হয় তাকে তাড়িতচুম্বক বলে।
তাড়িতচুম্বক এক ধরনের অস্থায়ী চুম্বক।
তাড়িতচৌম্বক আবেশ : একটি গতিশীল চুম্বক বা তড়িৎবাহী বর্তনীর সাহায্যে অথবা একটি স্থির তড়িৎবাহী বর্তনীর তড়িৎ প্রবাহের পরিমাণ কম বেশি করে অন্য একটি সংকর বর্তনীতে বর্ণস্থায়ী তড়িচ্চালক বা তড়িৎপ্রবাহ উৎপন্ন হওয়ার পদ্ধতিকে তাড়িতচৌম্বক আবেশ বলে।
তড়িৎবাহী তারের ওপর চুম্বকের প্রভাব : তড়িৎবাহী তার নিজস্ব একটি চৌম্বকক্ষেত্রের সৃষ্টি করে। শক্তিশালী চুম্বকের বিপরীত মেরুদ্বয়ের মধ্যে সৃষ্ট চৌম্বকক্ষেত্র এবং তড়িৎবাহী তারের চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া ঘটে। ফলে তারটি উপরের দিকে লাফিয়ে ওঠে। তড়িৎ প্রবাহের দিক পরিবর্তন করলে নিচের দিকে নামে।
তড়িৎ মোটর : যে তড়িৎ যন্ত্র তড়িৎ শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে তাকে বৈদ্যুতিক মোটর বা
তড়িৎ মোটর বলে।
যেমন:বৈদ্যুতিক পাখা, কম্প্রেসার, পাম্প ইত্যাদিতে বৈদ্যুতিক মোটর ব্যবহৃত হয়।
তড়িৎ মোটর দুই প্রকার। যথা :
১. ডিসি মোটর ও ২. এসি মোটর।
জেনারেটর বা ডায়নামো: যে তড়িৎ যন্ত্রে যান্ত্রিক শক্তিকে তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয় তাকে ডায়নামো বা জেনারেটর বলে। তাড়িতচৌম্বক আবেশের ওপর ভিত্তি করে এ যন্ত্রের মূলনীতি প্রতিষ্ঠিত।
জেনারেটর দুই প্রকার। যথা :
১. এসি জেনারেটর বা এসি ডায়নামো
২. ডিসি জেনারেটর বা ডিসি ডায়নামো।
১.এসি ডায়নামো : যে তড়িৎ যন্ত্রে যান্ত্রিক শক্তিকে পরিবর্তী বা পর্যাবৃত্ত তড়িৎ প্রবাহে রূপান্তর করা হয় তাকে এসি ডায়নামো বলে।
২.ডিসি ডায়নামো : যে তড়িৎ যন্ত্রে যান্ত্রিক শক্তিকে একমুখী তড়িৎ প্রবাহে রুপান্তর করা হয় তাকে ডিসি ডায়নামো বলে।
ট্রান্সফর্মার বা রূপান্তরক: যে বৈদ্যুতিক যন্ত্রের সাহায্যে পরিবর্তিত উচ্চ বিভবকে নিম্ন বিভবে বা নিম্ন বিভবকে উচ্চ বিভবে রূপান্তরিত করা যায় তাকে রূপান্তরক বা ট্রান্সফর্মার বলে।
তড়িৎ চৌম্বক আবেশ নীতির ওপর ভিত্তি করে ট্রান্সফর্মার বা রূপান্তরক তৈরি করা হয়। ট্রান্সফর্মার সাধারণত দুই প্রকারের হয়।
যথা : ১. উচ্চধাপী বা আরোহী ট্রান্সফর্মার,
২. নিম্নধাপী বা অবরোহী ট্রান্সফর্মার।
১.উচ্চধাপী বা আরোহী ট্রান্সফর্মার: যে ট্রান্সফর্মার অর্ধ বিভবের অধিক তড়িৎ প্রবাহকে অধিক বিভবের অল্প তড়িৎপ্রবাহে রূপান্তরিত করে তাকে উচ্চধাপী বা আরোহী বা স্টেপ আপ ট্রান্সফর্মার বলে।
২.নিম্নধাপী বা অবরোহী ট্রান্সফর্মার : যে ট্রান্সফর্মার অধিক বিভবের অল্প তড়িৎপ্রবাহকে অল্প বিভব তড়িৎপ্রবাহে রূপান্তরিত করে তাকে নিম্নধাপী বা অবরোহী বা স্টেপ ডাউন ট্রান্সফর্মার বলে। ট্রান্সফর্মারের কাজ :
১. দূর-দূরান্তে তড়িৎ প্রেরণের জন্য আরোহী বা উচ্চধাপী ট্রান্সফর্মার ব্যবহৃত হয়।
২. নিম্নধাপী বা অবরোহী ট্রান্সফর্মার ব্যবহৃত হয় নিম্ন ভোল্টেজ ব্যবহারকারী যন্ত্রপাতি, যেমন: রেডিও,
টেলিভিশন, টেপরেকর্ডার, ভিসিআর, ভিসিপি, ইলেকট্রনিক ঘড়ি, ওয়াকম্যান ইত্যাদি।
৩. বাসাবাড়িতে সংযোগ নেওয়ার পূর্বে নিম্নধাপী ট্রান্সফর্মার ব্যবহার করতে হয়।
৪. ট্রান্সফর্মার ভোল্টেজ ও তড়িৎ প্রবাহ উভয়কে রূপান্তর করে।
জাতীয় গ্রিড : পাওয়ার স্টেশন বা তড়িৎ উৎপাদন কেন্দ্রে তড়িৎ উৎপাদন করা হয়। এই উৎপন্ন তড়িৎকে উৎপাদন কেন্দ্র থেকে একটি প্রেরণ ব্যবস্থার মাধ্যমে সারাদেশে পাঠানো হয়। এই ব্যবস্থায় পাওয়ার স্টেশনগুলো পরস্পরের সাথে সংযুক্ত থাকে। এই ব্যবস্থার নাম জাতীয় গ্রিড।
তড়িৎ প্রেরণ ব্যবস্থা:
১. পাওয়ার স্টেশনগুলোতে উৎপাদিত তড়িৎ জাতীয় গ্রিডের সাহায্যে সারাদেশে তারের মাধ্যমে তড়িৎ সরবরাহ করা হয়।
২. তারের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রেরণের সময় তাপ শক্তি উৎপাদনে তড়িৎ এর অপচয় কম করার জন্য ভোল্টেজ বাড়িয়ে তড়িৎ প্রবাহ কমানো হয়।
৩. পাওয়ার স্টেশন থেকে তড়িৎকে ২৫০০০ ভোল্টে পাঠানো হয়।
৪. উচ্চ ভোল্টেজকে তড়িৎ গ্রাহকের ব্যবহার উপযোগী করার জন্য স্টেপ ডাউন ট্রান্সফর্মারের সাহায্যে 220 V নিয়ে আসে।
এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সুএসমূহ হলো:
Eₚ , Eₛ হচ্ছে মূখ্য ও গৌণ কুন্ডলীর ভোল্টেজ,
nₚ , nₛ হচ্ছে মূখ্য ও গৌণ কুন্ডলীর পাকসংখ্যা,
Iₚ , Iₛ হচ্ছে মূখ্য ও গৌণ কুন্ডলীর তড়িৎপ্রবাহ হলে,
১. Eₚ / Eₛ = nₚ / nₛ = Iₛ / Iₚ হয়
তবে,
২. Eₚ / Eₛ = nₚ / nₛ
৩. nₚ / nₛ = Iₛ / Iₚ
৪. Eₚ / Eₛ = Iₛ / Iₚ
এই অধ্যায়ের সকল নোট এর পিডিএফ পেতে এখানে ক্লিক করুন---
Download Now