ত্রয়োদশ অধ্যায়
আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক্স
LECTURE SHEET
তেজস্ক্রিয়তা : ফরাসি বিজ্ঞানী হেনরি বেকরেল (Henry Becquerel) ১৮৯৬ সালে দেখতে পান যে, ইউরেনিয়াম ধাতুর নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিশেষ ভেননশক্তিসম্পন্ন বিকিরণ অবিরত নির্গত হয়। বেকরেল আরও লক্ষ্য করেন,
যে মৌল থেকে এই বিকিরণ নির্গত হয় তা একটি সম্পূর্ণ নতুন মৌলে রূপান্তরিত হয়। এটি একটি নিউক্লীয় ঘটনা। এই বিকিরণ তেজস্ক্রিয় রশ্মি (Radioactive rays) নামে পরিচিত।
*কোনো মৌল থেকে তেজস্ক্রিয় কণা বা রশ্মি নির্গমনের ঘটনাকে তেজস্ক্রিয়তা (Radioactivity) বলে। তেজস্ক্রিয় মৌল আলফা, , বিটা ও গামা নামে তিন ধরনের শক্তিশালী রশ্মি নির্গমন করে।
আলফা কণা : ১. হিলিয়াম নিউক্লিয়াস
২. হাইড্রোজেন পরমাণুর ভরের চার গুণ
৩. আধান 3.2 × 10⁻¹⁹ C
৪. আয়নায়ন সৃষ্টি করতে পারে
বিটা কণা : ১. ভর ইলেকট্রনের সমান অর্থাৎ 9.1 × 10⁻³¹ kg
২. ঋণাত্মক আধানযুক্ত ।
৩. গ্যাসে আয়নায়ন সৃষ্টি করে ।
গামা রশ্মি:
১. ভর নেই
২. আধান নিরপেক্ষ
৩. দুর্বল আয়নায়ন ক্ষমতা
8. বেগ 3 × 10⁸ ms⁻¹
অর্ধায়ু : যে সময়ে কোনো তেজস্ক্রিয় পদার্থের মোট পরমাণুর ঠিক অর্ধেক পরিমাণ বয়সপ্রাপ্ত হয় তাকে ঐ পদার্থের অর্ধায়ু বলে।
তেজস্ক্রিয় রশ্মির ব্যবহার:
i. রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়।
ii. রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়
iii. কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়
iv. গোয়েন্দা কাজে ব্যবহৃত হয়
v. শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
ইলেকট্রনিক্স : ভ্যাকুয়াম টিউব, বিশেষ ধরনের কেলাস ও চিপসের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহের নিয়ন্ত্রণ হলো ইলেকট্রনিক্স। রেডিও, টেলিভিশন, ফোন, ফ্যাক্স, কম্পিউটার, ক্যামেরা, ঘড়ি ইত্যাদি সকল ডিভাইস ইলেকট্রনিক্সের অবদান।
এনালগ সংকেত: যে সংকেতের মান নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিবর্তিত হয় তাকে বলে এনালগ সংকেত।
সুতরাং এনালগ সংকেত হলো নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিবর্তনশীল ভোল্টেজ বা কারেন্ট। এই ভোল্টেজ বা কারেন্ট স্বাভাবিকভাবে পরিবর্তিত হয় এবং নিম্নতম থেকে উচ্চতম মানের মধ্যে যেকোনো মান গ্রহণ করতে পারে। এনালগ সংকেত আসলে একটি সাইন তরঙ্গ।
অডিও ও ভিডিও ভোল্টেজ হলো এনালগ সংকেতের উদাহরণ।
ডিজিটাল সংকেত: ডিজিট শব্দটির অর্থ সংখ্যা। ডিজিটাল শব্দটি এসেছে 'ডিজিট' বা সংখ্যা থেকে। ডিজিটাল সংকেত বলতে সেই যোগাযোগ সংকেত বোঝায় যা শুধু কিছু নির্দিষ্ট মান গ্রহণ করতে পারে।
এ ব্যবস্থায় বাইনারি কোড অর্থাৎ ০ ও ১ এর সাহায্য নিয়ে যেকোনো তথ্য, সংখ্যা, অক্ষর, বিশেষ সংকেত ইত্যাদি বোঝানো এবং প্রেরিত হয়। এই সংকেত ব্যবস্থায় 'অন' অবস্থার মান ১' এবং 'অফ' অবস্থার মান ০।
অর্ধপরিবাহী: কিছু কিছু পদার্থ (যেমন সিলিকন ও জার্মেনিয়াম) আছে যেগুলো সুপরিবাহী নয়, অন্তরকও নয়। এদের বলা হয় অর্ধপরিবাহী। বিশুদ্ধ অর্ধপরিবাহী শীতল অবস্থায় অন্তরকের মতো কাজ করে এবং স্বাভাবিক।
*কক্ষ তাপমাত্রায় খুব সামান্য পরিবাহী। কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট অন্য পদার্থ এর সাথে যোগ করে এর পরিবাহিতা বাড়ানো যায়। কোন পদার্থ যোগ করা হয়েছে তার ভিত্তিতে অর্ধপরিবাহীকে n-টাইপ ও p-টাইপ হিসাবে ভাগ করা হয়।
*সিলিকনের সাথে ফসফরাস যোগ করে তৈরি অর্ধপরিবাহী হলো n- টাইপ অর্ধপরিবাহীর একটি উদাহরণ।
সমন্বিত বর্তনী : সমন্বিত বর্তনী বা ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট আইসি (IC) নামে বেশি পরিচিত। কম্পিউটার, মোবাইল ফোন থেকে শুরণ করে মাইক্রোওভেন পর্যন্ত যত রকম বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বর্তমানে আমরা দেখি তার অধিকাংশটিতেই আইসির ব্যবহার দেখা যায়।
মাইক্রোফোন : মাইক্রোফোনকে চলতি কথায় মাইক বলে। কোনো বড় সভা বা অনুষ্ঠানে বক্তা যে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলেন তাকে মাইক্রোফোন বা মাইক বলা হয়।
মাইক্রোফোন শব্দকে তড়িৎ সংকেতে রূপান্তর করে। মাইক্রোফোন হলো এমন একটি ডিভাইস যা শব্দতরঙ্গকে তাড়িত অডিও তরঙ্গ বা সংকেতে পরিবর্তিত করে। তাড়িত অডিও তরঙ্গের কম্পাঙ্ক ও আপেক্ষিক বিস্তার শব্দ তরঙ্গের মতোই থাকে।
স্পিকার: স্পিকার মাইক্রোফোনের ঠিক বিপরীত কাজটি করে। স্পিকার মাইক্রোফোনের তড়িৎ সংকেতকে অনুরূপ শব্দে রূপান্তরিত করে।
রেডিও : রেডিও বিনোদন ও যোগাযোগের একটি গুরত্বপূর্ণ মাধ্যম। মোবাইল বা সেলুলার টেলিফোন যোগাযোগে রেডিও ব্যবহৃত হয়। রেডিও আবিষ্কারে যেসব বিজ্ঞানী অবদান রেখেছেন, তারা হলেন ইতালির গুগলিয়েলমো মার্কনি ও বাংলাদেশের স্যার জগদীশচন্দ্র বসু।
টেলিভিশন: টেলিভিশন হলো এমন একটি যন্ত্র যার সাহায্যে আমরা দূরবর্তী কোনো স্থান থেকে শব্দ শোনার সঙ্গে বক্তার ছবি টেলিভিশনের পর্দায় দেখতে পাই। লজি বেয়ার্ড ১৯২৬ সালে টেলিভিশনে চিত্র প্রেরণে সক্ষম হন ।
টেলিফোন: টেলিফোন হলো বিশ্বের সর্ববৃহৎ, সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় এক জটিল যোগাযোগ মাধ্যম। যেকোনো দেশে কথাবার্তা বলা, বার্তা, ফ্যাক্সবার্তা পাঠানো, কম্পিউটার যোগাযোগ, ই-মেইল আদান-প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে এটি ব্যবহৃত হয়।
আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল (Alexander Graham Bell) ১৮৭৫ সালে টেলিফোন আবিষ্কার করেন। বহু বিবর্তনের মধ্য দিয়ে গ্রাহাম বেলের আবিষ্কৃত টেলিফোন আজকের আধুনিক টেলিফোনে এসে পৌঁছেছে, তৈরি হয়েছে কড়লেস, সেলুলার, মোবাইল ইত্যাদি নামের টেলিফোন।
মোবাইল ফোন: মোবাইল ফোন বা মুঠোফোন বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম ।
শুধু যোগাযোগ নয় এ ফোনে ক্যাশ পেমেন্ট, বিল পরিশোধ, এয়ারপোর্টে চেক-ইন ও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির দরখাস্ত করতে পার।
ফ্যাক্স: ফ্যাক্স হলো এমন একটি ইলেকট্রনিক ব্যবস্থা যার মাধ্যমে যেকোনো তথ্য, ছবি, চিত্র, ডায়াগ্রাম বা লেখা হুবহু কপি করে প্রেরণ করা যায়। এ যন্ত্রের সাহায্যে যেকোনো মূল দলিল হুবহু পুনরুৎপাদন করা হয়। ১৮৪২ সালে ফ্যাক্স মেশিন আবিষ্কৃত হলেও রেডিও ফ্যাক্স এর যাত্রা শুরু হয় ১৯৩০ সালে। বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার বেইন ফ্যাক্স আবিষ্কার করেন।
কম্পিউটার: কম্পিউটার শব্দের অর্থ গণক বা হিসাবকারি। কম্পিউটার হলো একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা উপাত্ত গ্রহণ, প্রক্রিয়াকরণ, রূপান্তর, সরবরাহ ও প্রেরণ করে।
গাণিতিক হিসাব ছাড়াও কম্পিউটার কোনো কিছু পছন্দ করা বা নির্বাচন করা, নকল করা, তুলনা করা, ধারাবাহিকভাবে সাজানো ইত্যাদি কাজ করতে পারে। ব্যবসা, বাণিজ্য, প্রশাসন, শিক্ষা, শিল্প, চিকিৎসা, যোগাযোগ, প্রতিরক্ষা, বিনোদন প্রভৃতি ক্ষেত্রে কম্পিউটারের প্রয়োগ দিন দিন বেড়ে চলেছে।
ইন্টারনেট : ইন্টারনেট হলো 'নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক' বা 'সকল নেটওয়ার্কের জননী'। এটি একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক যা সংযুক্ত করেছে বিভিন্ন দেশের প্রায় ৪,০০,০০০ এর বেশি ছোট ছোট নেটওয়ার্ককে যুক্ত করে ।
১৯৬৯ সালে আমেরিকার প্রতিরক্ষা বিভাগ ইন্টারনেট চালু করেছে। ইন্টারনেট হলো এমন একদল নেটওয়ার্ক বা অসংখ্য কম্পিউটার, মোডেম, টেলিফোন লাইন দিয়ে তৈরি। এসব উপাদান পরস্পরের সাথে ভৌতভাবে সংযুক্ত।
এ নেটওয়ার্ক পরস্পরের সাথে যেকোনো তথ্য বা উপাত্ত আদান প্রদানে সক্ষম ।
ই-মেইল : ইলেকট্রনিক মেইলকে সংক্ষেপে বলা হয় ই-মেইল। ই-মেইল হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে বন্ধুবান্ধব, সহপাঠী, আত্মীয়স্বজন বা সহকর্মীদের সাথে দ্রুত যোগাযোগের উপায়। ইন্টারনেটের সাহায্যে এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে চিঠি পাঠানো ও গ্রহণ করা যায়, ডকুমেন্ট, চিত্র, ছবি এবং যেকোনো তথ্য আদান-প্রদান করা যায়।
এই অধ্যায়ের সকল নোট এর পিডিএফ পেতে এখানে ক্লিক করুন---
Download Now