পঞ্চম অধ্যায়
রাসায়নিক বন্ধন (Chemical Bond)
LECTURE SHEET
যোজ্যতা ইলেকট্রন : কোনো মৌলের সর্বশেষ প্রধান শক্তিস্তরের মোট ইলেকট্রন সংখ্যা সেই মৌলের যোজন ইলেকট্রন বা যোজ্যতা ইলেকট্রন ।Li, Na, O, F এর যোজ্যতা ইলেকট্রন সংখ্যা যথাক্রমে 1, 1, 6 ও 7। N ও Ca এর যোজ্যতা ইলেকট্রন সংখ্যা যথাক্রমে 5 ও 2।
যোজনী বা যোজ্যতা : কোনো মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসের সর্বশেষ কক্ষপথে যত সংখ্যক ইলেকট্রন থাকে অথবা যত সংখ্যক বিজোড় ইলেকট্রন থাকে তাকে ঐ মৌলের যোজনী বা যোজ্যতা বলে।
• ধাতব মৌলের ক্ষেত্রে সর্বশেষ কক্ষপথের ইলেকট্রন সংখ্যা মৌলের যোজ্যতা নির্দেশ করে।
• অধাতব মৌলের ক্ষেত্রে সর্বশেষ কক্ষপথের বিজোড় ইলেকট্রন সংখ্যা মৌলের যোজ্যতা নির্দেশ করে।
• মৌলের সর্বশেষ কক্ষপথের উপস্তরসমূহের মধ্যে ইলেকট্রন পুনর্বিন্যাসের কারণে বিজোড় ইলেকট্রন সংখ্যা পরিবর্তিত হয়। এই মৌলসমূহ পরিবর্তনশীল যোজ্যতা বা একাধিক যোজ্যতা প্রদর্শন করে।
• উচ্চ পারমাণবিক সংখ্যাবিশিষ্ট ধাতব মৌল পরিবর্তনশীল যোজ্যতা প্রদর্শন করে।
• যোজ্যতা মূলত কোনো মৌলের অন্য মৌলের সাথে যুক্ত হওয়ার সামর্থ্য বা ক্ষমতা ।
•পর্যায় সারণির নিষ্ক্রিয় মৌলসমূহের যোজ্যতা শূন্য ধরা হয়।
যৌগমূলক : যৌগমূলক হচ্ছে একাধিক মৌলের একাধিক পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত একটি পরমাণুগুচ্ছ যা একটি আয়নের ন্যায় আচরণ করে। যৌগমূলকসমূহকে আধানসহ লেখা হয়। এরা ধনাত্মক বা ঋণাত্মক আধানবিশিষ্ট হতে পারে। যৌগমূলকসমূহের আধানই তাদের যোজ্যতা।
জেনে রাখ
১. প্রত্যেক যৌগের পৃথক সংকেত থাকে।
২. সংকেত যৌগের অণুতে পরমাণু বা আয়নের অনুপাত প্রকাশ করে।
৩. আধানবিশিষ্ট আয়ন ও নিরপেক্ষ পরমাণু দ্বারা যৌগের অণু গঠিত হয়।
৪. ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আধানবিশিষ্ট আয়ন দ্বারা যৌগ গঠিত হলে যৌগের মোট আধান শূন্য হয়।
৫. ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আয়ন দ্বারা গঠিত যৌগের সংকেত লেখার সময় ধনাত্মক অংশ প্রথমে এবং ঋণাত্মক অংশ পরে লেখা হয়।
৬. দুটি নিরপেক্ষ পরমাণুর মাধ্যমে যৌগ গঠনের সময় সাধারণত পর্যায় সারণির বামপাশের মৌলকে প্রথমে লেখা হয়।
নিষ্ক্রিয় গ্যাস :
• পর্যায় সারণির 18 গ্রুপের মৌলসমূহকে নিষ্ক্রিয় গ্যাস বলা হয়।
• এই গ্রুপের মৌলসমূহ হলো হিলিয়াম, নিয়ন, আর্গন, ক্রিপটন, জেনন ও রেডন ।
• একমাত্র হিলিয়াম ছাড়া অন্য সকল নিষ্ক্রিয় মৌলের যোজ্যতা স্তর s²p⁶ অর্থাৎ ৪টি ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ।
• He এর যোজ্যতা স্তরে 2টি ইলেকট্রন থাকে।
• এসব মৌলের যোজ্যতা স্তরের ৪টি ইলেকট্রন স্থিতিশীল অবস্থা প্রদান করে। এ কারণে মৌলসমূহ রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয়। অন্যান্য মৌল ইলেকট্রন গ্রহণ বা বর্জন করে নিকটবর্তী পারমাণবিক সংখ্যাবিশিষ্ট নিষ্ক্রিয় মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাস অর্জন করতে চায়। এর দ্বারা মৌলসমূহ স্থায়িত্ব অর্জন করে।
জেনে রাখ
১. স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য মৌলসমূহ নিষ্ক্রিয় মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাস লাভ করতে চায়।
২. মৌলের He-এর ইলেকট্রন বিন্যাস লাভ করাকে দুই- এর নিয়ম এবং যোজ্যতা স্তরে ৪টি ইলেকট্রন বিন্যাস লাভ করাকে অষ্টক নিয়ম বলে।
৩. H, Li পরমাণু যৌগের অণু গঠনের সময় এদের নিকটতম নিষ্ক্রিয় গ্যাস হিলিয়ামের ইলেকট্রন বিন্যাস লাভ করতে চায় ।
৪. F, Cl, Br সহ অন্যান্য পরমাণু যৌগের অণু গঠনের সময় এদের নিকটতম নিষ্ক্রিয় গ্যাস নিয়ন, আর্গন, ক্রিপটন ইত্যাদির ইলেকট্রন বিন্যাস লাভ করতে চায়।
জেনে রাখ
১. বিভিন্ন মৌল ইলেকট্রন আদান-প্রদান অথবা শেয়ারের মাধ্যমে বন্ধন গঠন করে।
২. কোনো মৌলের শেষ শক্তিস্তরে ইলেকট্রন অর্থাৎ যোজ্যতা ইলেকট্রন বন্ধন গঠনে অংশগ্রহণ করে।
৩. প্রতিটি পরমাণুরই লক্ষ্য থাকে ইলেকট্রন গ্রহণ বা বর্জনের মাধ্যমে তার নিকটবর্তী নিষ্ক্রিয় মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাস লাভ করা।
৪. ১ থেকে ১৭ পারমাণবিক সংখ্যাবিশিষ্ট মৌলসমূহ বন্ধনকালে খুব সহজেই দুই-এর বা অষ্টক নিয়ম মেনে চলে।
৫. যে আকর্ষণ বলের মাধ্যমে একটি পরমাণু অন্য পরমাণুর সাথে যুক্ত হয় তাকে রাসায়নিক বন্ধন বলে।
ক্যাটায়ন - অ্যানায়ন :
• ধনাত্মক চার্জযুক্ত পরমাণুকে ক্যাটায়ন বলে ।
• ঋণাত্মক চার্জযুক্ত পরমাণুকে অ্যানায়ন বলে ।
• স্বাভাবিক অবস্থায় পরমাণুতে ইলেকট্রন ও প্রোটন সংখ্যা সমান থাকে।
• পরমাণুতে ইলেকট্রন ঋণাত্মক চার্জযুক্ত আর প্রোটন ধনাত্মক চার্জযুক্ত থাকে।
• একটি ইলেকট্রন ত্যাগের কারণে পরমাণুতে ধনাত্মক চার্জের পরিমাণ এক একক বেড়ে যায়। তখন এটি একটি একক ধনাত্মক চার্জযুক্ত আয়নে পরিণত হয়। একে ক্যাটায়ন বলে।
• একটি ইলেকট্রন গ্রহণের কারণে পরমাণুতে ঋণাত্মক চার্জের পরিমাণ এক একক বেড়ে যায়। তখন এটি একটি একক ঋণাত্মক চার্জযুক্ত আয়নে পরিণত হয়। একে অ্যানায়ন বলে ।
• ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন কাছাকাছি এসে আয়নিক বন্ধন গঠন করে। • ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আয়ন দ্বারা গঠিত হয় আয়নিক বন্ধন।
• আয়নিক বন্ধন সাধারণত পর্যায় সারণির গ্রুপ 1 ও 2-এর ধাতু এবং 16 ও 17-এর অধাতুর মধ্যে ঘটে থাকে। • ধাতুসমূহ ইলেকট্রন বর্জন করে ক্যাটায়নে এবং অধাতুসমূহ ধাতু কর্তৃক দানকৃত ইলেকট্রন গ্রহণ করে অ্যানায়নে পরিণত হয়।
• দুটি ভিন্নধর্মী পরমাণুর মাধ্যমে গঠিত হয় আয়নিক যৌগ।
• পর্যায় সারণির 1 থেকে 20 পর্যন্ত পারমাণবিক সংখ্যাবিশিষ্ট মৌলসমূহই প্রকৃতপক্ষে আয়নিক বন্ধন গঠন করে।
• আয়নিক বন্ধনে আবদ্ধ মৌলসমূহ বন্ধন গঠনকালে দুই-এর নীতি ও অষ্টক নীতি অনুসরণ করে।
সমযোজী বন্ধন : সর্বশেষ শক্তিস্তরে স্থায়ী ইলেকট্রন বিন্যাস লাভের জন্য ইলেকট্রন শেয়ারের মাধ্যমে যে বন্ধন গঠিত হয়, তাকে সমযোজী বন্ধন বলে।
• সাধারণত দুটি অধাতব পরমাণুর মধ্যে সমযোজী বন্ধন ঘটে থাকে।
• বন্ধনে অংশগ্রহণকারী পরমাণু সমসংখ্যক ইলেকট্রন যোগান দিয়ে এক বা একাধিক ইলেকট্রন যুগল সৃষ্টি করে যা উভয় পরমাণু সমানভাবে শেয়ার করে।
• সমযোজী বন্ধনে গঠিত মৌলিক অণুকে (যেমন : O₂ ) সমযোজী অণু এবং যৌগকে সমযোজী যৌগ (যেমন : O₂ ) বলে। • কিছু সমযোজী যৌগের অণু কম তাপমাত্রায় গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে (CO₂, CH₄, NH₃ ইত্যাদি) এবং কিছু কঠিন অবস্থায় থাকে (S₈, I₂ ইত্যাদি)।
• এদের অণুসমূহ দুর্বল ভ্যানডার ওয়ালস্ শক্তি দ্বারা আবদ্ধ থাকে যা কম তাপমাত্রায় ভেঙে যায়। CO₂, CH₄, NH₃ ইত্যাদির অণুসমূহের মধ্যে ভ্যানডার ওয়ালস্ শক্তি নেই বললেই চলে, যার ফলে এরা গ্যাসীয় অবস্থায় একক অণু হিসেবে ঘুরে বেড়ায়।
জেনে রাখ
১. আয়নিক যৌগসমূহের গলনাংক ও স্ফুটনাংক উচ্চ এবং সমযোজী যৌগসমূহের গলনাংক ও স্ফুটনাংক নিম্ন।
২. আয়নিক যৌগের অণুতে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক প্রান্ত থাকায় এদের আন্তঃআণবিক শক্তি বেশি হয়। অপরদিকে, সমযোজী যৌগের অণু নিরপেক্ষ হওয়ায় এদের অণুসমূহের মধ্যে দুর্বল ভ্যানডার ওয়ালস্ আকর্ষণ শক্তি বিদ্যমান থাকে।
৩. পানিতে প্রায় সকল আয়নিক যৌগ দ্রবীভূত হয়। অপরদিকে, বেশিরভাগ সমযোজী যৌগ পানিতে দ্রবীভূত হয় না। চিনি ও অ্যালকোহল সমযোজী যৌগ হওয়া সত্ত্বেও পানিতে দ্রবীভূত হয়।
৪. আয়নিক যৌগ কঠিন অবস্থায় বিদ্যুৎ পরিবহন করে না কিন্তু গলিত এবং দ্রবীভূত অবস্থায় বিদ্যুৎ পরিবহন করে।
৫. বিদ্যুৎ পরিবহনের জন্য মুক্ত আয়ন বা ইলেকট্রনের উপস্থিতি এবং তাদের চলাচলের প্রয়োজন হয়। আয়নিক যৌগের কঠিন অবস্থায় তা সম্ভব হয় না কিন্তু গলিত এবং দ্রবীভূত অবস্থায় তা সম্ভব হয়।
৬. সমযোজী যৌগসমূহ বিদ্যুৎ পরিবাহী হয় না। বিদ্যুৎ পরিবহনের জন্য যে আয়ন প্রয়োজন তা সমযোজী যৌগে নেই।
৭. সমযোজী বন্ধনে শেয়ারকৃত ইলেকট্রনকে আকর্ষণ করার ক্ষমতাকে তড়িৎ ঋণাত্মকতা বলে।
৮. তড়িৎ ঋণাত্মকতার কারণে সমযোজী যৌগের অণুতে আংশিক ধনাত্মক ও আংশিক ঋণাত্মক প্রান্ত সৃষ্টি হওয়ার ঘটনাকে বলে পোলারিটি।
৯. যে সমযোজী যৌগে পোলারিটি সৃষ্টি হয় তাকে পোলার সমযোজী যৌগ বলে। পোলার সমযোজী যৌগসমূহ পানিতে দ্রবীভূত হয়।
জেনে রাখ
১. ধাতব পরমাণুসমূহ যে আকর্ষণ বল দ্বারা পরস্পরের সাথে আবদ্ধ থাকে তাকে ধাতব বন্ধন বলে।
২. সকল ধাতুরই শেষ শক্তিস্তরে কমসংখ্যক ইলেকট্রন আছে। এই ইলেকট্রনগুলো পরমাণুর কক্ষপথ থেকে বের হয়ে সমগ্র ধাতব খণ্ডে মুক্তভাবে চলাচল করে ।
৩. ইলেকট্রন হারিয়ে ধাতুর পরমাণুগুলো আয়নে পরিণত হয়ে এক ত্রিমাত্রিক কেলাসে অবস্থান করে।
৪. সঞ্চরণশীল ইলেকট্রনের কারণে ধাতব খন্ডে উচ্চচাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহিতা, প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যের সৃষ্টি হয় । সব ধাতুই বিদ্যুৎ সুপরিবাহী।
এই অধ্যায়ের সকল নোট এর পিডিএফ পেতে এখানে ক্লিক করুন ---
এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানমূলক এবং অনুধাবনমূলক প্রশ্নসমূহের পিডিএফ পেতে এখানে ক্লিক করুন ---
এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্ন এবং সমাধানের পিডিএফ পেতে এখানে ক্লিক করুন ---
এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নসমূহের পিডিএফ পেতে এখানে ক্লিক করুন ---
জ্ঞানকে নিজের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখতে নেই, বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দাও।
thanks vaia
ReplyDelete